বিসিএসে ক্যাডার প্রত্যাশীগণ ভাইভাপ্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
Shamim Anwar
এএসপি ( র্যাব); ৩৪তম বিসিএস (পুলিশ), [বর্তমানে র্যাব-৯ এর এএসপি হিসেবে কর্মরত]
এক্স- একাউন্টিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সুকঠিন প্রতিযোগিতার দুটি পর্যায় পার হয়ে আপনারা যারা স্বপ্ন পূরণের শেষ স্বর্ণদ্বারে উপনীত হয়েছেন, আপনাদেরকে অভিনন্দন। বাকি আর একটিমাত্র ধাপ। কঠোর পরিশ্রম ও নিরন্তর অধ্যবসায়ের সমন্বয়ে আগের দুটো ধাপ আপনি যেভাবে পাড়ি দিয়েছেন, জীবনের সবচে গুরুত্বপূর্ণ এই অগ্নিপরীক্ষায়ও যদি আপনি তেমনই সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে পারেন তাহলেই আপনি হয়ে যাবেন বহু আকাঙ্ক্ষা -স্বপ্ন-প্রত্যাশার বিসিএস ক্যাডার। এ পর্যায়ে আপনাকে একজন চেয়ারম্যান ( যিনি পিএসসির সদস্য) ও দুজন অভিজ্ঞ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা ভার্সিটি টিচারের সমন্বয়ে গঠিত ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হতে হবে, যারা আপনার মেধা যাচাইয়ের পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক বিষয়াদিতে জানাশোনা এবং প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা হিসেবে মানসিক গঠন, আচরন, কথাবার্তা যাচাইপূর্বক ২০০ নম্বরের মধ্যে আপনার প্রাপ্য নম্বর প্রদান করবেন।
সিলেবাসহীন এ পরীক্ষায় যেহেতু আপনার পড়াশুনা বা জ্ঞানগরিমার বাইরেও আরো অনেক দিক বিবেচনায় আনা হবে, তাই এর প্রস্তুতিপর্বও হওয়া চাই তেমনই শাণিত ও বহুমুখী।
সাধারণত বিসিএসের ভাইভায় যেসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়, সেগুলোকে আমরা দুটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে নিতে পারিঃ
>>Introduce yourself
>>Describe your educational background
>>Why…… is you first choice
>>Relation between your subject and first choice.
>>your district
>>Liberation war
>>from last night to now
>>journey to PSC.ইত্যাদি।
এ প্রশ্নগুলো সাধারণত ইংরেজিতেই করা হয়। যেহেতু কমন প্রশ্ন, বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীই এ প্রশ্নগুলোকে অবহেলার চোখে দেখে এবং গাইড হতে মুখস্থ করা গতানুগতিক দায়সারা গোছের একটি উত্তরই দিয়ে থাকেন। অথচ ভাইভায় ভাল নম্বর পাবার অন্যতম পূর্বশর্ত হল বোর্ডের নিকট এটা প্রমান করা যে, আপনি অন্যসব পরীক্ষার্থীর মত নন, আপনি “স্পেশাল ওয়ান” ( ঠিকই ধরেছেন, হোসে মরিনহোর বিখ্যাত ডায়ালগ)। আর এটা প্রমান করার সবচে ভাল সুযোগ আপনি পাবেন এ টাইপের পূর্বঅনুমিত প্রশ্নসমূহের উত্তর করার সময়।তাই অন্যদের মত গাইডবুক থেকে নয়, এ প্রশ্নসমূহের উত্তর রেডি করুন একটু যত্ন নিয়ে।
ভাল হয়, কয়েক জন বন্ধু একসাথে প্লান করে উত্তরসমূহ যার যার মত বাসায় সুন্দর করে লিখে নিন। লেখার সময় গাইডের ট্রাডিশনাল এনসারগুলোর হেল্পও নিতে পারেন কিন্তু ভাষা পরিবর্তন করে নিতে ভুলবেন না। কঠিন ও মৌখিক ভাষায় ব্যবহার হয়না, এমন শব্দ বাদ দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। এরপর সবাই একসাথে বসে সবগুলো উত্তর সমন্বয় করে ভালো ভালো অংশ মিলিয়ে একটা উত্তর তৈরি করে ফেলুন। যে সকল পরিচিত বড় ভাইরা বিভিন্ন ক্যাডারে আছেন তাদের সাথে আলোচনা করে জেনে নিন, উনারা কি কৌশলে এসব প্রশ্নের উত্তর করেছিলেন। তারপর তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই উত্তরগুলোকে আরেকটু ঘষামাজা করে একটা চমৎকার উত্তর দাড় করিয়ে শুরু করুন প্র্যাকটিস। বন্ধুরা মিলে মক ভাইভা ও দিতে পারেন। প্র্যাকটিসে উত্তর দেওয়ার সময় এমন একটি ভংগী বজায় রাখতে সচেষ্ট হোন, যাতে মনে হয় উত্তরটি আপনি আগ থেকে মুখস্থ করে রাখেননি , বরং তাতক্ষণিকভাবে বলছেন।
২. #ফার্স্ট_ও_সেকেন্ড_চয়েস_মুক্তিযুদ্ধ_একাডেমিক_ও_অন্যান্যঃ
প্রথম ক্যাটাগরির প্রশ্ন কমন পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা যেমন নিশ্চিত থাকতে পারি
এক্ষেত্রে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোন টপিককে প্রাধান্য দিয়ে প্রশ্ন করবেন, তা নিতান্তই পরীক্ষকের মর্জি ও আপনার উত্তর প্রদানের পরম্পরার ওপরই নির্ভর করে ( কারনআপনার মুখে উচ্চারিত যেকোন একটি শব্দকে বেইজ করে পরের প্রশ্ন হওয়ার চান্স ৯০%) তাই একজনকে দেখা গেল দুয়েকটি বাদে প্রায় সব প্রশ্ন একাডেমিক থেকে জিজ্ঞেস করেছেন, আবার অন্যজনের ক্ষেত্রে হয়তো সে পথই মাড়ান নি। এ ক্যাটাগরিতে প্রশ্ন সরাসরি কমন পাবার সম্ভাবনা যেহেতু খুবই কম, তাই এর প্রস্তুতিকৌশলটাও হবে প্রথম ক্যাটাগরির তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্নতর। এ প্রস্তুতি শুধুই বই পড়াতে সীমাবদ্ধ নয়; পেপার পডা, টিভি দেখা, চলতি ঘটানাবলিতে নজর রাখাও এর অন্তর্ভুক্ত।
এ অংশের প্রস্তুতির জন্য আপনি যে যে ম্যাটেরিয়াল ফলো করতে পারেন সে সম্পর্কে আমি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে টপিকওয়াইজ একটু বলি:
(১) #মুক্তিযুদ্ধ_ও_বঙ্গবন্ধু_সম্পর্কিতঃ
এই টপিক থেকে ২/৪টি প্রশ্ন থাকবেই, তাই এ সম্পর্কিত প্রস্তুতির ওপর খুব জোর দিন। বিশেষ করে নিম্নের টপিকসমুহ একটু ভালমতো দেখবেন –
>বঙ্গবন্ধুর পরিচয়, শিশুবেলা, শিক্ষা ও রাজনৈতিক জীবন, বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবরণসহ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এর কাল রাত্রির বিস্তারিত বিবরণ
>লাহোর প্রস্তাব, একুশের ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ৬ দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯ এর গণ অভ্যুথান, ৭০ এর নির্বাচন সহ বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত সময়ের ঘটনাবলি।
>স্বাধীনতার ইশতিহার ঘোষণা, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ৭ মার্চের ভাষণ, অসহযোগ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা,২৫শে মার্চ ও অপারেশন সার্চলাইট, স্বাধীনতা ঘোষণা পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ, মুজিবনগর সরকার, এ সরকারের শপথ, জাতীয় চার নেতার জীবনবৃত্তান্ত, মুক্তিবাহিনী, সেক্টর সংখ্যা-অবস্থান, ও কমান্ডার ( বিশেষ করে আপনার এলাকা যে সেক্টরের অধীনে ছিল, তার বিস্তারিত জেনে নিবেন), বুদ্ধিজীবী হত্যাএবং ১৬ ডিসেম্বর এর ঘটনাবলি
>আপনার জেলা/বিভাগে মুক্তিযুদ্ধের কোন স্মৃতিনিদর্শন বা যুদ্ধক্ষেত্র( থাকলে)
>বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম বীরপ্রতীক খেতাবের সংখ্যা( তবে বীরশ্রেষ্ঠ দের সম্পর্কে বিস্তারিত), ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন বৈদেশিক শক্তির ভূমিকা।
#প্রয়োজনীয়_ম্যাটেরিয়ালসঃ
>অনেকেই অনেক বইয়ের নাম সাজেস্ট করবেন, সেগুলো পড়লে নিঃসন্দেহে ভাল প্রস্তুতি এনশিওরও হবে। কিন্তু কথা হলো, এত সময় কি পাবেন? আমি তো শুধু অসমাপ্ত আত্মজীবনী (আগ থেকেই একাধিকবার পড়া ছিল), বাংলাপিডিয়ার বাংলা ভার্সন থেকে সংশ্লিষ্ট সবগুলো টপিক ( না পড়লে বুঝবেন না, সংক্ষেপে প্রয়োজনীয় তথ্য কী চমৎকারভাবে এটাতে দেওয়া আছে) এবং ওরাকল গাইডের সংশ্লিষ্ট অংশই পড়ে গিয়েছিলাম ( কমও না কিন্তু)।
>মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ১ টি কবিতা ( সবাই তো দেখি শামসুর রাহমানের স্বাধীনতা তুমিইই পড়ে আসে), ১ টি গান ( স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত কোন গান হলে ভাল হয় ), মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৫ টি করে নাটক, সিনেমা ও উপন্যাস এর নাম।
(২) #নিজের_ক্যাডার_চয়েস_রিলেটেডঃ
.>প্রথম ও ২য় পছন্দক্রমের ক্যাডারের ইতিহাস ও গৌরবগাঁথা, অর্গানোগ্রাম, হায়ারার্কি
,ভিশন ও মিশন সহ অন্যান্য মৌলিক তথ্যাবলি।
>১ম ও ২য় পছন্দক্রমের ক্যাডারের কাজ-দায়িত্ব, এখতিয়ার,উক্ত ক্যাডারের সেবার মান বাড়ানোর জন্য সাম্প্রতিক গৃহীত পদক্ষেপ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়ের মন্ত্রী, সচিব, আইজিপি, রেক্টর স্যার দের নাম।
>নিজের প্রথম চয়েস যে ক্যাডার, সে ক্যাডারের কোন সিনিয়র কর্মকর্তা কর্তৃক লিখিত বিখ্যাত ১ টি বই ( কমপক্ষে বইয়ের নাম), মুক্তিযুদ্ধে ওই ক্যাডারের ভূমিকা
( বিশেষ করে পুলিশ ফার্স্ট চয়েস হলে), মুক্তিযুদ্ধ কালীন ওই ক্যাডারের প্রধান কর্মকর্তাবৃন্দের নাম এবং ক্যাডারসংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি।
>বিভিন্ন সাইকোলজিক্যাল প্রশ্ন, যেমন পুলিশ বা এডমিনে যারা ভাইভা দিবেন, তাদের কাছে জানতে চাইতে পারেন ” আপনি কি ঘুষ খাবেন?”
#প্রয়োজনীয়_ম্যাটেরিয়ালসঃ
>বাজারে প্রচলিত যে কোন গাইড থেকে পড়ে নিবেন, তাতেই হবে ( আমি ওরাকল পড়েছিলাম, সেটি তো জানেনই)। পাশাপাশি বাংলাপিডিয়ায়ও অনেক রিলেটেড ম্যাটেরিয়াল পাবেন।
>পররাষ্ট্র ফার্স্ট চয়েস যাদের, তারা এর বাইরে বাজার থেকে প্রিলিমিনারি আন্তর্জাতিক এর যেকোন একটা বই, একটা ওয়ার্ল্ড ম্যাপ ( ভাইভাবোর্ড অনেক সময় বিশ্বের বিভিন্ন স্থান কোথায় তা ম্যাপে দেখাতে, বিশ্বের একস্থান হতে অন্য স্থানে সড়ক/ নৌ পথে যাতায়াতের রাস্তা দেখাতে বলে) কিনে নিবেন।
>পুলিশ ও প্রশাসন ক্যাডারের প্রার্থীরা স্বস্ব মন্ত্রণালয় /সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে সংশ্লিষ্ট সাম্প্রতিক ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড /উদ্যোগ / সফলতা সম্পর্কিত লিখাসমূহ প্রিন্ট করে নিবেন। আইন ও টার্ম সংক্রান্ত আলাদা বই এ সময় না পড়াই উচিত হবে। স্বল্পসময় এবং বহুমুখী প্রস্তুতির বাস্তবতায় সেটি ‘ খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি’ রূপ পরিগ্রহ করতে পারে।
(৩) #একাডেমিক_বিষয়_সম্পর্কিতঃ
ভাইভা বোর্ডে আপনার অনার্স/মাস্টার্স পর্যায়ে পঠিত বিষয় হতে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করাটা প্রায় অবধারিত। তবে মনে রাখবেন, এই প্রশ্নসমুহ সাধারণত খুব ডিপের কিছু হয় না। বরং বোর্ড সাধারণত একেবারে কমন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ছাত্র হিসেবে না জানাটা রীতিমতো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে, এমন প্রশ্নগুলোই জানতে চেয়ে থাকেন।
#প্রয়োজনীয়_ম্যাটেরিয়ালসঃ
ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ে আপনার বিষয় সংশ্লিষ্ট যে বই চালু আছে, সেটাই ভালমতো দেখে নিন। কারন এখানে আপনি শুধু আপনার বিষয়সম্পর্কিত প্রয়োজনীয়, বাহুল্যবর্জিত, মৌলিক টার্মস/ ধারনা /তথ্যগুলোই পাবেন।
যারা আরেকটু সতর্কভাবে এগোতে চান, তারা অনার্স মাস্টার্স এর শুধু গুরুত্বপূর্ণ কোর্সগুলোর প্রয়োজনীয় অংশগুলো দেখে নিন
১. আপনার ভাইভার ধার্য্যকৃত দিনটি যে মাস ও তারিখে পড়েছে, সে মাস ও তারিখের ঐতিহাসিক ঘটনাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত। (যেমন, ফেব্রুয়ারি বা মার্চে যারা ভাইভা দিবেন, তারা আপনার ভাইভার তারিখে বায়ান্ন বা একাত্তরে বিশেষ কোন ঘটনা ঘটেছিল কিনা, অবশ্যই জেনে নিবেন। যেমন, সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি বা এমন কিছু গঠন, ধর্মঘট, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, স্বাধীনতার ইশতেহার, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বা এজাতীয় অন্য কোন কর্মসূচী।)
২. আপনার নামের সাথে মিল আছে, এমন কোন বিখ্যাত ব্যক্তি থাকলে তার জন্মস্থান, সাল , জীবন ও কর্মসহ তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। নাম আরবিতে হলে তার অর্থ।
৩. আপনার এলাকা/জেলা/উপজেলার এমপি, ডিসি, এসপি, ইউএনও,কবি, গীতিকার, বীরশ্রেষ্ঠ, ভাষা সৈনিক, রাজনীতিবিদ, বিখ্যাত ও সাবেক- বর্তমান প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কিত তথ্যাবলি। (কারন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইভাবোর্ডে যুগ্মসচিব বা অতিরিক্তসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাগন এক্সটারনাল হিসেবে এসে থাকেন, যারা দীর্ঘ চাকুরী জীবনের কোন না কোন সময় হয়তো আপনার নিজ জেলা বা পার্শ্ববর্তী জেলায় চাকুরি করেছেন, তাই উনার সাথে পরিচয় ছিল বা আছে, এমন কোন লোককে যদি আপনি ও ভাল ভাবে চেনেন, আপনার ব্যাপারে উনার মনে একটা গুড ইম্প্রেশন তৈরি হবে, নিশ্চিত থাকুন।) এছাড়া বাংলা ও ইংরেজিতে নিজের জেলার অবস্থান-আয়তনসহ বিস্তারিত পরিচয়, জেলার নামকরনের ইতিহাস ,পর্যটন বা অন্যকোন গুরুত্বপূর্ণ দিক সমূহ, নিজ জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, পত্রিকা, নদনদী, ঐতিহাসিক স্থাপনা বা নিজের ক্যাডার পছন্দের কোন সিনিয়র কর্মকর্তা (যদি থাকে) সম্পর্কিত বিষয়াদি।
৪. আপনার জেলা/ বিভাগে যদি কোন প্রখ্যাত কবি / শিল্পী জন্মগ্রহণ করে থাকেন, তার অন্তত একটি কবিতা/গান মুখস্থ করে চর্চা করুন ( যেমন: আপনার বাড়ি সিলেট হলে শাহ আব্দুল করিম/হাসন রাজা, নেত্রকোনায় হলে উকিল মুন্সী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হলে আলাউদ্দিন খা’র গান; ফরিদপুর হলে জসীমউদ্দিনের কবিতা)। আর অবশ্যই সম্পূর্ণ জাতীয় সংগীত সঠিক সুরে গাওয়ার অভ্যাস করুন
৫. নিজের ভার্সিটি/ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইতিহাস এবং ভার্সিটি রিলেটেড গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ( ভিসি, প্রোভিসি, কোষাধ্যক্ষ ও বিখ্যাত কোন শিক্ষক) সহ এ সম্পর্কিত অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি। ( মনে রাখবেন, আপনার বোর্ড চেয়ারম্যান বা এক্সটারনাল স্যারদের কেউ একজন আপনার ভার্সিটির শিক্ষক বা সাবেক ছাত্র হতে পারেন। নিজের ভার্সিটির ছাত্র পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই তিনি এ সম্পরর্কে বেশি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেন। তখন যদি উত্তর দিতে না পারেন….)
৬. সরকারের নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সাফল্য ; যথা, পদ্মাসেতু, সমুদ্রবিজয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইত্যাদিসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক লিখিত বিভিন্ন বই, প্রাপ্ত এওয়ার্ড ও স্বীকৃতি
৭. আপনি বর্তমানে যদি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত থাকেন, তাহলে সেই চাকুরির বৈশিষ্ট্য / কাজের ধরন ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং কেন সেই চাকুরি ছাড়তে চান’ এর ব্যাখ্যা।
৮. বাংলাদেশের সংবিধানের ইতিহাস, এর গুরুত্বপূর্ণ ধারা ও সংশোধনীসমুহ।
৯. রেগুলার একটা বাংলা আর একটা ইংরেজি পত্রিকা (আমি প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পড়েছি/ পড়ি) ; ওই পত্রিকার সম্পাদকের নাম, উপসম্পাদকীয়তে কে কোন শিরোনামে নিয়মিত কলাম লিখেন,( যেমন কালের পুরান- সোহরাব হাসান, সহজিয়া কড়চা- সৈয়দ আবুল মকসুদ ইত্যাদি)। আমার একটা বাজে অভ্যাস আছে, পত্রিকা হাতে আসামাত্রই কোনদিকে না তাকিয়ে খেলার পাতাটা গোগ্রাসে গিলতে থাকি, পরে টাইম পেলে অন্যকিছু, না পেলে নাই। ( আপনাদের এই অভ্যাস আছে নাকি ভাই, থাকলে অবিলম্বে এটা বাদ দিন।) নিজের পছন্দ- আদর্শ- বিশ্বাসে উর্ধে উঠে নির্মোহ ভাবে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পার্ট নিয়মিত পড়ুন।
১০. প্রত্যেক মাসের কারেন্ট এফেয়ার্স ও ওয়ার্ল্ড ( কে নিজের নখ ৬ হাত লম্বা করেছে, মজা পাবার জন্য এ টাইপ খবর না পড়ে খুটিয়ে খুটিয়ে সম্পূর্ণ ঘটনাবলি পড়ুন।)
১১.সামাজিক বিভিন্ন সূচকের অবস্থান ও অর্থনীতির সম্ভাবনাময় খাতসমূহ।(যেমন- শিল্প, সেবা, কৃষি, জিডিপি, জাতীয় আয়, মাথাপিছু জাতীয় আয়, বাজেট ইত্যাদি।
এছাড়াও সাম্প্রতিক দেশীয় আলোচিত বিষয়াদি যেমন মধ্যম আয়ের দেশ ও এর ক্রাইটেরিয়াসমুহ, পদ্মা সেতু, সমুদ্রবিজয় এবং আন্তর্জাতিক আলোচিত বিষয় – আইএসআইএস, ইরান রাশিয়া তুরস্ক ইত্যাদি ইস্যু দেখে নিন।)
১২. আর ( লাস্ট, বাট নট দ্য লিস্ট) অবশ্যই অবশ্যই প্রিভিয়াস বিসিএসের রিয়াল ভাইভা ব্যাংক ( বাজারের প্রচলিত বিভিন্ন গাইডের সাথে পাবেন, নেট থেকেও নিতে পারেন) সংগ্রহ করে ভালভাবে পড়ে নিতে ভুলবেন না। এটি আপনাকে ভাইভার বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা দেওয়ার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস ও বাড়িয়ে দেবে নিঃসন্দেহে।
(উপরিউক্ত বিষয়সমূহের প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিরোনাম লিখে google এ সার্চ দিলে প্রচুর প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাবেন। আমি গাউসুল আজম মার্কেটের মামুন ভাইয়ের দোকান সিলিকন নেটে বসে একদিনেই প্রিন্টিং বিল দুহাজার টাকার বেশি দিয়েছিলাম)
#উপস্থাপনা_বিষয়ক_প্রস্তুতিঃ
আপনি পড়তে পড়তে জান কোরবান করে ফেললেন,কিন্তু সঠিক সময়ে যদি তা সঠিকভাবে তুলে ধরতে না পারেন, তাহলে কাজের কাজ কিছু কি হবে!!! মাঝ থেকে পরিশ্রম টাই সার। তখন রাগে দুঃখে নিজের চুল ছেড়া ব্যতীত আর কিছুই করার থাকবে না। এমন যেন না হয়, সেজন্য আগ থেকেই উপস্থাপনা বিষয়ক কিছু প্রস্তুতি নিন
১. ফার্স্ট চয়েস পররাষ্ট্র হলে তো বটেই, এমনকি অন্যান্য ক্যাডার চয়েসের ক্ষেত্রেও ভাইভা প্রায়সময়ই ইংরেজিতে নেওয়া হয়। তাছাড়া বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ইংরেজিতে বর্ণনা করতে বলা তো একেবারেই সাধারণ ঘটনা। তাই ইংরেজির ওপর দখল বাড়ানোর বিকল্প নেই। আমি যেটা করেছিলাম, আমার এক বন্ধুর ( সেও ভাইভা পরীক্ষার্থী ছিল) সাথে রাত ১০ টার পর নিয়মিত ১ ঘন্টা ইংরেজি তে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতাম।( উন্নতি হইছিল মনে হয় টুকটাক)
২.আপনার গায়ের রঙ ফর্সা বা কাল, উচ্চতায় আপনি লম্বা বা খাটো, আপনার কণ্ঠস্বর দরাজ বা কিন্নর, শরীরস্বাস্থ্যে আপনি সুমোকুস্তিগীর বা টেলিসামাদ টাইপ যেমনই হন, নিজের চালচলন, বাচনভঙ্গি ও উচ্চারন শৈলিতে মার্জিত ও প্রমিত একটি ভাব নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। উচ্চারণগত জড়তা, আঞ্চলিক টান, কিংবা নির্দিষ্ট কোন বর্ণ উচ্চারণে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে মনযোগী হোন (আপুদের অবশ্য এই সমস্যা নেই, আমি আজ পর্যন্ত শিক্ষিত/ অশিক্ষিত, গ্রাম্য-শহুরে কোন মেয়েকে আনস্মার্টভংগীতে কথা বলতে শুনিনি)। আর এসবের জন্য আপনি ভাল কোন আবৃত্তিকারের ক্লিপ ইউটিউব থেকে নামিয়ে শুনতে পারেন, আশা করি দৃশ্যমান উন্নতি লাভ করবেন( যতটুকু হয় আর কি,!! এই বয়সে এসে আকাশ-পাতাল কিছু আশা করতে যাবেন না যেন; কথায় আছে না, কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে…..)
৩. ভাল কোন বক্তার ( যেমন বারাক ওবামা)বক্তৃতার ভিডিও ও আইসিএস এর ভাইভা ক্লিপ ( এটাও youtube এ পাবেন) সংগ্রহ করে মনযোগ দিয়ে দেখুন। কথা বলার সময় তাদের চোখ, মুখ্, অংগভংগীসহ অন্যান্য বডি ল্যাংগোয়েজ খেয়াল করুন।
নিজে সে অনুযায়ী চেষ্টা করুন।
#পোশাক_পরিচ্ছদঃএ বিষয়েও নানা মুনির নানা মতের কথা শুনে আসছি। কেউ বলছেন টাই পরে যাওয়া যাবে না তো অন্যজন বলছেন্ টাই না পড়লে মহাসর্বনাশ। প্যান্ট-শার্টের রঙ চুলের স্টাইল নিয়েও আছে বিভিন্ন মত।যারা পরামর্শ দিচ্ছেন, তারা সবাই যেহেতু অভিজ্ঞ, হয়তো তাদের কারো কথাতেই ভুল নেই। যে কোন একজনেরটা ফলো করলেই চলবে। তারপরও আমি নিজে যা করেছিলাম, সেটি একটু শেয়ার করি -
১. হালকা স্ট্রাইপ এর সাদা শার্ট ( সাদা শার্টে অন্য রঙ এর স্ট্রাইপ না হয়ে সাদা স্ট্রাইপই আমার ফেবারিট)
২. সফট কাপড়ের কালো রঙের প্যান্ট। ( এলিফ্যান্ট রোডের টপটেন এ ভাল কালেকশন পাবেন)
৩. আপুদের ক্ষেত্রে শোভন রঙের শাড়ি ও ম্যাচিং ব্লাউজ ( হালকা নীল বা সবুজের মধ্যে হলে কেমন হয়) লাল বা হলুদ রঙ বর্জন করাই ভাল। হিল পরা হতে বিরত থাকুন।
৪. খুব স্টাইল করা সু পরবেন না। সাধারন ও মার্জিত দেখে কিনুন। ( বাটা বা এপেক্স থেকে নিতে পারেন।)
৫. টাই অবশ্যই পরবেন। ( আমি নীল বা কালোর মধ্যে পরি) এখন যেহেতু গরমের সময়, ব্লেজার পড়ার প্রয়োজন নেই, শীতকাল হলে পরতেও পারেন (যদিও আমি নিজে ভাইভার জন্য কখনো এটা পরিনি)
৬. ভাইভার তারিখের কমপক্ষে ৩/৪ দিন আগে চুল কাটিয়ে নিন। ( অবশ্যই বলে দিবেন, যেন বেশি ছোট না করে)
৭. আপুরাও ৩/৪ দিন আগে পার্লারে গিয়ে চুলের মার্জিত শেপ দিয়ে আসতে পারেন। চুল ছোট করবেন না। আর ভাইভার দিন চুল বেনী করে নিলে ভাল হয়। কোনভাবেই শক্ত করে বেনী করবেন না, আরামদায়ক রাখুন।
হালকা গয়না পরতে পারেন, যেমন কানে ছোট দুল বা নাকফুল। কপালে টিপ পরা বা সাজগোজের গয়না পরা হতে বিরত থাকুন।
৮. ভাইভার দিন পিএসসিতে যাওয়ার কতক্ষন পর আপনার সিরিয়াল আসবে, তা অনিশ্চিত। সেটি একঘণ্টা ও হতে পারে আবার ৫ ঘন্টাও হতে পারে। তাই যাদের ত্বক তৈলাক্ত ( যেমন আমার), তারা অবশ্যই টিস্যু বা রুমাল নিয়ে যাবেন ( আমি রুমালই নেই) আপনার আগেরজনের আগের জন যখন ভাইভা দিতে ঢুকবেন, তখন ওয়াশরুমে গিয়ে প্রচুর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ভালভাবে মুছে ফেলুন। ফ্রেশ একটা লুক আসবে। যাদের ভাইভার সিরিয়াল নভেম্বর /ডিসেম্বরে পড়ে যাবে,তারা মুখ ধোয়ার পর ব্যবহারের জন্য সাথে করে লিপজেল এবং কোল্ডক্রীম নিয়ে যাবেন। আপুরা এই সময় গায়ের রঙের সাথে ম্যাচ করে অতি হালকা মেকআপ ও করে নিতে পারেন। মোট কথা বোর্ডে ঢোকার আগ মুহূর্তে নিজের লুকটাকে সজীব করে নিতে যাযা করা দরকার, তাই করবেন।
#আগের_রাত_ও_সকালঃ
ভাইভার আগের রাতে একটি ভাল ঘুম অত্যন্ত জরুরি ( আমার অবশ্য ঘুমই আসে না!!) খাওয়াদাওয়া করে একটু আগেভাগে শুয়ে পড়ুন। তবে শোয়ার পূর্বে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র একটি ফাইলে রেখে দিন, সকালে যেন খোঁজাখুঁজি করতে না হয়। সকালে উঠে সব টপিক সংক্ষেপে একবার রিভাইজ করে, শেভ / গোসল সেরে ( ওয়াশরুমে যাওয়ার কথাও কি বলব!!) নাস্তা করে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আবার চেক করে নিয়ে পিএসসিতে উপস্থিত হবার নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে আধাঘণ্টা আগে পৌছার টার্গেট নিয়ে বাসা থেকে বের হবেন। পকেটে কলম রাখতে এবং হাতে ঘড়ি পরে নিতে ভুলবেন না।যেতেযেতে ওইদিনের প্রধান প্রধান বাংলাও ইংরেজি পত্রিকার শিরোনাম দেখতে থাকুন।বাংলা, খ্রিষ্টীয় ও হিজরি তারিখ দেখে নিতে ভুলবেন না।অনেকেই আছেন, পিএসসিতে উপস্থিত হবার পর থেকে হৈ-হল্লা বা অন্যদের সাথে গল্প গুজবে মেতে উঠেন, এতে আপনার মনযোগ সরে গিয়ে মানসিক প্রস্তুতি ও দঢ়সংকল্প মনোভাব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে তীরে এসে তরী ডোবার মতো করে হাত ফসকে যেতে পারে আপনার এত দিনের সাধনার ফল। তাই এমন অপরিণামদর্শী কাজ হতে বিরত থাকুন।
#অতঃপর_বোর্ডে :
এত এত যে আয়োজন, তার মূল উদ্দেশ্য তো একটাই- বিসিএস ক্যাডার হবার আজন্ম লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভাইভায় ভাল একটি নম্বর নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্য পূরনে ভাইভা বোর্ডে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন-
১. আগে সালাম নাকি আগে অনুমতি, এটা নিয়ে দেখবেন একেকজন একেক রকম কথা বলছে। বিভিন্ন বইয়েও দেখবেন লেখা আছে ভিন্ন ভিন্ন কথা। সবগুলোই হয়তো সঠিক।
আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গিটা বলি-
দরজা খুলে ধরে বোর্ড চেয়ারম্যান এর দিকে তাকিয়ে আপনি বলবেন, আমি কি আসতে পারি স্যার, উনি ঢুকার অনুমতি দিলে ঢুকে সফট করে দরজা বন্ধ করে ধীর পদক্ষেপে হেটে বোর্ডের সামনে গিয়ে বলবেন, আসসালামুআলাইকুম। উনি সালামের উত্তর দিয়ে বসতে বললে বসবেন, না বললে ১০ সেকেন্ডের মত দাঁড়িয়ে থাকার পর বলবেন, স্যার, আমি কি বসতে পারি?
২. চেয়ার যদি টেবিলের খুব কাছাকাছি থাকে, তাহলে দুই হাত দিয়ে আলতো করে ধরে একটু পিছিয়ে নিয়ে চেয়ারে বসবেন। বসার আগে আবারো চেয়ারটাকে একটু এগিয়ে ঠিক পজিশনে নিয়ে আসুন (তবে এই দরজা খোলা বা চেয়ারে বসার সময় কোন শব্দ যেন না হয়, সেটি লক্ষ্য রাখুন)
৩. চেয়ারের হাতায় বা টেবিলের ওপর নিজের হাত রাখবেন না। হাত কোলের ওপর রাখুন
৪. কুজো হয়ে বসবেন না, আবার মেরুদণ্ড সোজা টানটান করে হাস্যকরভাবেও বসবেন না।
৫. বিভিন্ন বইতে দেখেছি, হাসি হাসি মুখে থাকার পরামর্শ। ( কোন কারন ছাড়া এই মুহূর্তে একটু হাসি হাসি মুখ করুন, দেখুন তো কেমন লাগে!! ) বরং আমি মনে করি, স্যাররা মজার কিছু বললে বা ওরকম সলিচুয়শন ক্রিয়েট হলে মৃদু হাসবেন, অন্যসময় আত্মবিশ্বাস ও বিনয়ের সমন্বয়ে ভদ্রোচিত একটা ভাব বজায় রাখতে চেষ্টা করুন। চেহারায় উদ্ধত,গম্ভীর কিংবা ভয়ার্ত ভাব আনবেন না।
৬. এ ছাড়া অন্যান্য সাধারণ বিষয়াদি, যেমন প্রশ্নকর্তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা, প্রশ্ন ও উত্তরের ভাষাগত সাদৃশ্য (অর্থাৎ যে ভাষায় প্রশ্ন হয়েছে, সে ভাষায় উত্তর) বজায় রাখা, ধীরস্থির থাকা এবং ছটপট করা,নখ ছিড়া, নাকে হাত দেওয়া, বারবার কাশির মত শব্দ করা, নাক টানাসহ সকল প্রকার মুদ্রাদোষ পরিহার করতে সচেষ্ট হোন।
৭. যারা ভাইভা নিতে আসেন, তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করবেন না। মনে রাখবেন, পিএসসি দেশের অত্যন্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা / একাডেমিসিয়ানদেরই ভাইভা বোর্ডের সদস্য হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে। তাই বোর্ড সদস্যদের বোকা ভেবে কোন প্রকার আলগা চালাকি, মিথ্যা তথ্য দেওয়া, তর্কে লিপ্ত হওয়া হওয়া থেকে বিরত থাকুন। ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক প্রশ্নে নিজের উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দিন।
৮. উত্তর দেওয়ার সময় এমন কোন শব্দ/টার্ম ব্যবহার করবেন না, যে সম্পর্কে আপনি সম্যক অবহিত নন। বরং চেষ্টা করুন যেসব টপিকে আপনার ভাল দখল আছে, সে টপিক রিলেটেড শব্দাবলি ব্যবহারের। কারন আগেই বলেছি, আপনার মুখে উচ্চারিত যেকোন একটি শব্দকে বেইজ করে পরের প্রশ্ন হওয়ার চান্স ৯০%.
৯. বিসিএস এর ভাইভা বোর্ড সদস্যরা শুধু আপনার অর্জিত জ্ঞান বা জানাশোনার গভীরতাই পরখ করেন না, বরং আপনার স্মার্টনেস, আপনার আত্মবিশ্বাস, সিচুয়েশন হ্যান্ডেলিং ক্যাপাবিলিটি, জানা বা অজানা বিষয়ে উপস্থাপনার ঢং, বিরূপ পরিস্থিতিতে আপনি কিভাবে রিএক্ট করেন ( যেমন বোর্ড হয়তো আপনাকে আনপ্লেজেন্ট কোন প্রশ্ন বা আপনার বিষয়ে নেতিবাচক কোন মন্তব্য করতে পারেন, এসব পরিস্থিতিতে বোর্ড আপনার প্রতি বিরূপ বা আপনাকে পছন্দ করছেন না, এমনটা ভেবে বিচলিত হয়ে পড়বেন না, বরং আত্মবিশ্বাসের সাথে আপনার বক্তব্য তুলে ধরুন। এ ক্ষেত্রে উত্তর দেওয়ার সময় মুখে হাসি-খুশি ভাব বজায় রাখুন, যাতে বোর্ড বুঝতে পারে আপনি ঘাবড়ে বা রেগে যান নি। ) প্রভৃতি বিষয়সহ একজন প্রথমশ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে সার্বিক দিক বিবেচনায় আপনার যোগ্যতা যাচাই করে দেখতে চান, ভাইভা ফেস করার সময় বিষয়টি মাথায় রাখুন।
১০.দুয়েকটা প্রশ্নের উত্তর করতে না পারলেও ঘাবড়ে যাবেন না। (কেউ কি বাস্তবে তা পারে)। বিনয়ের অবতার সেজে বলুন, ‘স্যরি স্যার, এই প্রশ্নটির উত্তর আমার জানা নেই’। প্রকৃতপক্ষে ভাইভাবোর্ডে আপনি কয়টা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলেন বা পারলেন না, এটা কোন বিষয় নয়। বরং বোর্ডকে স্যাটিসফায়েড করে আসতে পারাটাই আসল।
#কতিপয়_FAQ
Frequently Asked Questions
১. #ভাইভাতে_যাওয়ার_সময়_কি_কি_কাগজপত্র_নিয়ে_যাওয়া_লাগবে?
>> #নিয়মিত_কাগজপত্রসমূহঃ (সবাই নিয়ে যাবেন)
১.শিক্ষাজীবনের সকল সার্টিফিকেটের মূলকপি
২.সকল সার্টিফিকেটসমূহের ৩টি করে সত্যায়িত ফটোকপি। বন্ধুবান্ধবের পরামর্শে ফেইক সত্যায়িত করা হতে বিরত থাকবেন; সাধনার ধন হাতেরমুঠোয় এসে ফসকে যেতেও পারে।
৩.বিপিএসসসি ফর্ম ১,ফর্ম ২, ফর্ম ৩, পুলিশ ভেরিফিকেশন ফর্ম প্রত্যেকটির ৩ কপি করে
৪. এডমিট কার্ড, ভাইভা কার্ড, প্রত্যেকটির তিনটি করে সত্যায়িত ফটোকপি
৫. বিপিএসসি ফর্ম২ এর নির্দেশিত স্থানে পাসপোর্ট সাইজের ছবি আঠা দিয়ে লাগিয়ে উপরে সত্যায়িত করিয়ে নিবেন। এছাড়া আর ৪/৫ কপি ছবি নিয়ে যাবেন।
#শর্তসাপেক্ষ_কাগজপত্রঃ (নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির প্রার্থীদের জন্য)
১.চাকুরিরত থাকলে> বিভাগীয় অনুমতিপত্র
২. মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদন করে থাকলে> মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র
৩. যাদের অনার্সের সার্টিফিকেটে ৪ বছর কথাটি উল্লেখ নেই> তারা এ মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়ন পত্র।
৪. অবতীর্ণ প্রার্থী ( অর্থাৎ অনার্স পরীক্ষা হয়েছে, কিন্তু ফল প্রকাশ হয়নি) হিসেবে আবেদন করে থাকলে> এপিয়ার্ড সার্টিফিকেট
( উপরের প্রত্যেকটি সনদপত্রের মূলকপি ও ৩ কপি করে সত্যায়িত ফটোকপি নিয়ে যাবেন)
[ অনেককেই বলতে শুনবেন, আরে অমুক কাগজের ত এত কপি লাগে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। এক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা হলো একেক বোর্ডে একেক রকম কাগজ চায়। তাই একটু কষ্ট হলেও নিরাপদ পথে হাঁটাটাই কি শ্রেয়তর নয়!!!
২. #বিপিএসসিফর্ম_২_৩_এবং_পুলিশ_ভেরিফিকেশন_ফর্ম_কিভাবে_পূরণ_করব?
>>১. প্রতিটি কলাম নির্দেশনা মোতাবেক ও যথাযথভাবে পূরণ করবেন
২. যদি কোন কলামে লেখার মতো কিছু না থাকে ( যেমন, ধরা যাক আপনি অনার্স পাস, এখন কোন কলামে যদি মাস্টার্সের ফলাফল লিখতে বলে সেক্ষেত্রে) সেখানে “প্রযোজ্য নয়” কথাটি লিখবেন।
৩. #বোর্ড_কাগজপত্রের_মূলকপি_কি_রেখে_দিবে?
>>আগেই বলেছি, পিএসসির ভাইভার সময় মূল কাগজপত্রসমূহ অবশ্যই নিয়ে যেতে হবে। আপনি ভাইভা দেওয়ার আগেই সেটি সংশ্লিষ্ট বোর্ডের পিএ এর মাধ্যমে বোর্ডে পৌছে যাবে। ভাইভা শেষে আপনি যখন বোর্ড থেকে বের হবেন, তখন বোর্ডের একজন সদস্য ( সাধারণত বোর্ড চেয়ারম্যান) আপনার হাতে জেমসক্লিপ আটানো মূল কাগজের সেটটি ফিরিয়ে দিবেন।( চাকুরিরত প্রার্থীদের বিভাগীয় ছাড়পত্রের মূলকপিটি বোর্ড রেখে দিবেন)।
৪. #পিএসসিতে_উপস্থিত_হবার_পর_করনীয় — >>আপনার কিছুই করার দরকার নেই। যথাসময়ে পিএসসিতে উপস্থিত হয়ে নিচতলায় রাখা চেয়ারে অন্যান্য প্রর্থীদের সাথে বসে অপেক্ষা করতে থাকুন। বাকি কাজ পিএসসির কর্মকর্তাবৃন্দ যেভাবে ইনস্ট্রাকশন দেন, সেভাবেই করবেন। তারপরও আপনার কৌতূহল মেটানোর জন্য তারা কি কি ইন্সট্রাকশন দেবেন, সে সম্পর্কে একটা ধারনা দেই– আপনারা যখন নিচতলায় অপেক্ষা করবেন, প্রথমে পিএসসির এক বা একাধিক কর্মকর্তা ভাইভা চলাকালীন ‘কি করবেন, কি করবেন না’ ( do’s & dont’s) বিষয়ে নাতিদীর্ঘ ব্রিফ করবেন। তারপর একেএকে শুরু হবে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভিত্তিক বিভিন্ন বোর্ডে পরিক্ষার্থী প্রেরণ ( উদাহরণস্বরূপ, পিএসসি কর্মকর্তা ঘোষণা করলেন— ০৫০২৩০ রোল থেকে ০৫৬৪৮০ পর্যন্ত, এই রেঞ্জের মধ্যে যারা আছেন, তারা সামনে চলে আসেন। সবাই যাওয়ার পর একজন পিএসসি স্টাফকে দেখিয়ে উনাকে অনুসরণ করে উপরে যেতে বলবেন। উনার পিছন পিছন হাটতে হাটতেই প্রার্থী তার জন্য নির্ধারিত বোর্ডে পৌঁছে যাবেন।
৫. #যদি_কোন_কারনে_নির্ধারিত_সময়ের_মধ্যে_পিএসসিতে_পৌঁছাতে_না_পারি?
>>#কোন_কারনে_দেরি_হয়ে_গেল ( ধরুন ১১ টা বেজে গেল, ওদিকে ভাইভা তো শুরু হয়ে গেছে, প্লিজ আতঙ্কিত হবেন না। পিএসসিতে উপস্থিত হয়ে আপনার সমস্যার কথা জানান। কোন সমস্যা হবার কথা নয়। তবে সচেষ্ট থাকবেন, এ উটকো ঝামেলা যেন না পোহাতে হয়, সঠিক সময়েই যেন উপস্থিত হতে পারেন।
৬. #মোবাইল_বা_ব্যাগ_নেওয়া_যাবে?
>>মোবাইল নিবেন না। তবে ব্যাগ নিতে পারেন, সেটি কাউন্টারে জমা দিয়ে দিতে হবে ( আবারো বলছি, না নেওয়াই ভাল)
৭. #যদি_কোন_কাগজ_ভুলক্রমে_না_নিয়ে_বোর্ডে_চলে_যাই?
>>বোর্ডে উপস্থিত হবার পর যদি দেখেন এক বা একাধিক কাগজ আনতে ভুলে গেছেন, অস্থির হবেন না। বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানিয়ে অফিস টাইমের মধ্যে কাগজ নিয়ে আসার সুযোগ পাবেন। আবারো বলছি, এধরনের পরিস্থিতিতে যেন না পরতে হয়, সে বিষয়ে আগ থেকেই সতর্ক থাকুন।
৮. #ভাইভা_কোথায়_অনুষ্ঠিত_হবে?
>>যারা প্রথম বার ভাইভা দিচ্ছেন, তারা জেনে রাখুন, ভাইভা অনুষ্ঠিত হয় পিএসসির প্রধান অফিসে- যেটি ঢাকার আগারগাওয়ে পরিসংখ্যান ভবনের কাছাকাছি অবস্থিত।
#অন্যান্যঃ
১. প্রতিটি সত্যায়িত কাগজের উপরের ডান কোনায় নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বর অবশ্যই লিখবেন
২. কাগজপত্রগুলোর কোন সেট তৈরি করার প্রয়োজন নেই, আপনি যখন নির্ধারিত বোর্ডের সামনে হাজির হবেন, সেখানে একজন কর্মকর্তা এই কাজে নিয়োজিত থাকবেন। তিনিই সবরকম সেট-টেট করে আপনাকে ভাইভা বোর্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা নিবেন।
৩. যারা সত্যায়িত করা নিয়ে একেবারে অকূলপাথারে পরে যাবেন, কোনভাবেই কোন ব্যবস্থা করতে পারছেন না, তারা দয়া করে আমাকে ইনবক্সে নক করবেন, ইনশাআল্লাহ সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
৪. শেষমুহুর্তের জন্য ফেলে না রেখে ৮/১০ দিন আগেই সব কাগজপত্র গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন।
৫. মূলকপি ও ফটোকপিগুলো আলাদা দুটি ট্রান্সপারেন্ট ফাইলে করে নিয়ে যেতে পারেন।
রওনা হবার আগে সব কাগজপত্র নিন