বিসিএস ভাইভায় যেসব প্রশ্ন প্রায়ই জিজ্ঞাসা করা হয়
আইন ও অধ্যাদেশের মধ্যে পার্থক্য
১। জাতীয় সংসদে বিল আকারে যে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ও পাশ করা হয় তাকে আইন বলে।
সাধারণত যখন সংসদ অকার্যকর থাকে অথবা যখন সংসদের অধিবেশন বন্ধ থাকে তখন রাষ্ট্রের জরুরী প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি নিজের একক ক্ষমতাবলে যে আইন জারী করে তাকে অধ্যাদেশ বলে । কিন্তু পরবর্তী সংসদ অধিবেশন শুরু হবার ৩০ দিনের মধ্যে অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করতে হয় নতুবা তা বাতিল হয়ে যায়।
২। আইন সম্পর্কে সংবিধানের ৮০ অনুচ্ছেদে বলা আছে।
অধ্যাদেশ সম্পর্কে সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে।
৩। আইন প্রণয়ন শর্তহীন।
অধ্যাদেশ প্রণয়ন শর্তসাপেক্ষ।
৪। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আইন বিভাগের হাতে ন্যাস্ত।
অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষমতা নির্বাহী/শাসন বিভাগের হাতে ন্যাস্ত।
মুজিব ব্যাটারি ও মুজিব বাহিনী
মুজিব ব্যাটারি
স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে ১৯৭১সালের ২২জুলাই ভারতের কোনাবনে গঠন করা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম গোলন্দাজ ইউনিট ‘মুজিব ব্যাটারি‘ ।
মুজিব বাহিনী
১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধু ছাত্রদের নিয়ে গঠিত মুক্তিবাহিনীকে বলা হয় মুজিব বাহিনী । মুজিব বাহিনী গঠন করেন তাজ উদ্দিন আহমেদ।
বঙ্গবন্ধুর নিউক্লিয়াস ও চার খলিফা
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু ভিতরে ভিতরে ১৯৬২ সালে তাঁর অনুগত কিছু ছাত্রনেতাদের নিয়ে গোপনে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। যা বঙ্গবন্ধুর নিউক্লিয়াস নামে পরিচিত । ছাত্রদের নেতাদের মধ্যে ছিলেন-
১. সিরাজুল আলম খান; ২. তোফায়েল আহমেদ; ৩. ফজলুল হক মনি; ৪.আব্দুর রাজ্জাক; ৫.কাজী আরিফ; ৬.মনিরুল ইসলাম (মার্শাল মনি) ও আরো কয়েকজন ।
বঙ্গবন্ধু নিউক্লিয়াসের সদস্যদের নিজের সন্তানদের মতোই আদর করতেন । নিউক্লিয়াসের প্রচেষ্টায় ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন করার কথা প্রচারে আসে। এবং স্লোগান আসে বীর বাঙালি অস্ত্র ধর , বাংলাদেশ স্বাধীন কর ।
বঙ্গবন্ধুর ৪ খলিফা
নিউক্লিয়াসের কর্মসূচি এগিয়ে নেয়ার জন্য ৪জন ছাত্রনেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয় তারা হলেন
১. তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি >>> নূর আলম সিদ্দিকী
২. তৎকালীন ছাত্রলীগের সা. সম্পাদক >>> শাহাজান সিরাজ
৩. ঢা.বি ছাত্রসংসদের নির্বাচিত ভিপি >>> আ, স. ম. আব্দুর রব
৪. ঢা.বি ছাত্রসংসদের নির্বাচিত জি, এস >>> আব্দুল কুদ্দুস মাখন
বিচার বিভাগের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা আদৌ সম্ভব?
বিচার বিভাগের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা আদৌ সম্ভব? বা একটি আপনার কাছে কাম্য ?
= না, নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা আদৌ সম্ভব নয়। কেননা, সাধারণভাবেই স্বৈরতন্ত্র বা গণতন্ত্র সব সরকার ব্যবস্থাতেই বিচার বিভাগের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও বিভিন্ন প্রশাসনিক বিষয়ে শাসন বিভাগ বা নির্বাহী বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থেকে । অধিকন্তু, বিচার বিভাগের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা একে স্বৈরাচারী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে এবং দেশে সরকার ও বিচারকদের মধ্যে সম্পর্কে অবনিত ঘটিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে; বিধায় বিচার বিভাগের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা কাম্য হতে পারে না । এক্ষেত্রে সরকার বিভাগগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো চেক এ্যান্ড ব্যালান্স সম্পর্ক বজায় থাকাই শ্রেয় ।
প্রজাতন্ত্র ও গণপ্রজাতন্ত্র এর মধ্যে পার্থক্য কী?
প্রজাতন্ত্র: যে রাষ্ট্রে রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধান বা শাসক সরাসরি জনগণ বা প্রজা কর্তৃক নির্বাচিত হয় , সে রাষ্ট্রকে প্রজাতন্ত্র বলে। যেমন: তাইওয়ান
গণপ্রজাতন্ত্র: যে রাষ্ট্রে রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধান বা শাসক সরাসরি জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত না হয়ে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয় তাকে গণপ্রজাতন্ত্র বলে । যেমন: বাংলাদেশ। আমরা প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সংসদ সদস্য বা এমপি নির্বাচিত করি। সদস্যগণ পার্লামেন্টে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রধান নির্বাচিত করেন। তখন রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের সর্বাধিক আস্থাভাজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দেন।
আচ্ছা আপনি কি ২৪ ঘন্টাই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন?
আচ্চা আপনি কি ২৪ ঘন্টাই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন? যদি আপনার বস আপনাকে রাত ৪টার সময় ফোন দিয়ে ডিউটির কথা বলে। আপনি কি করবেন? আপনি কি সেই আদেশ মানতে বাধ্য?
– জ্বি স্যার। আমি পুলিশ অফিসার হিসেবে রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে যে কোন সময় যে কোন দায়িত্ব পালিন করতে প্রস্তুত আছি। আর এই ব্যাপারে আমার উর্ধতন স্যারের আদেশ শুধু মানবোই না বরং এটি আমার জন্য শিরোধার্য।
কেন মানবো?
কারণ, পুলিশ আইন,১৮৬১ এর ২২ ধারানুযায়ী একজন পুলিশ অফিসার সকল সময়ে তার দায়িত্ব পালনে বাধ্য থাকবেন। আমাদের সংবিধানের ২১ (২) অনুচ্ছেদেও সেই কথার প্রমাণ পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে যে, সকল সময়ে জনগণের সেবা করার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক কর্মচারীর দায়িত্ব।
জেনারেল ওসমানী কে “পাপা টাইগার” বলা হতো কেন?
মাত্র ২৩ বছর বয়সে নিজ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে বৃটিশ সেনাবাহিনীর মেজর পদে উন্নীত হয়ে তিনি রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন অক্ষুন্ন ছিল বহুদিন। তাছাড়া অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি বৃটেনের হয়ে বার্মা ফ্রন্টে জাপানিজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। ভারত-পাকিস্তান আলাদা হওয়ার পর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। বাঙ্গালীদের প্রতি পাকিস্তানীদের বৈষম্যের সবচেয়ে বড় উদাহরণ জেনারেল ওসমানী। কারণ পাকিস্তানী বাহিনীর প্রথম দশকে তিনি প্রমোশন পেয়ে কর্নেল হওয়ার পরেও যোগ্যতা থাকার সত্ত্বেও পরের দশকে আর কোন প্রমোশন পাননি তিনি। কর্নেল হয়েই তার অবসরগ্রহণ করতে হয়। ইয়াহিয়া খান,টিক্কা খান এবং নিয়াজীর সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও তাকে বৈষম্যের শিকার হয়ে ওসমানীকে এদের অধীনে কাজ করতে হয়। পাকিস্তানী আর্মিতে ওসমানীকে ধরা হত নিয়মানুবর্তিতার বিমূর্ত প্রতীক হিসেবে। ওসমানী পাকিস্তান আর্মির স্টাফ অফিসে কর্মরত থাকার সময় ইস্ট বেঙ্গলগুলো গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে এই ইস্ট বেঙ্গলগুলো মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। এই কারণে ওসমানীকে “পাপা টাইগার” বলা হতো। তিনি বেঙ্গল রেজিমেন্টর সৈন্যদের বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে কাজী নজরুলের “চল চল চল” গানটিকে তিনি তার রেজিমেন্টের রণসঙ্গীত হিসেবে বাছাই করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বাঙ্গালী অফিসারদের উপর ওসমানীর প্রভাব ছিল অনেক বেশী।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে গিয়েছিলেন কিনা ?
ধানমন্ডি-৩২ কিংবা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে গিয়েছিলেন কিনা ? কোথায় কী আছে ? এই নিয়ে গত তিন বিসিএসে প্রশ্ন করা হচ্ছে ! সময় নিয়ে দেখে আসুন !
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর নবনির্মিত সুদৃশ্য ভবনটির দ্বিতীয় তলায় উঠতেই চোখে পড়বে ছাদের সঙ্গে টাঙানো মাঝারি আকারের একটি যুদ্ধবিমান। নাম ‘হকার হান্টার’। আসন একটাই, চালকের। ভেতরে প্রস্তুত থাকত কামান, মিসাইল ও বোমা। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই হকার হান্টার যুদ্ধবিমানটি পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য ত্রাস হয়ে উঠেছিল। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এই যুদ্ধবিমান দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বেশ কিছু ঘাঁটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে এটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত সেই নিদর্শন ঠাঁই পেয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নবনির্মিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে।
সিঁড়ি বেয়ে ওপরের তলায় উঠতেই বিশাল করিডরে দেখা মিলল শিখা চির অম্লানের। চারপাশে পানি আর মাঝখানে শহীদের স্মৃতি নিয়ে জ্বলছে শিখা। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত হয়েছে এই শিখা চির অম্লান। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও ইতিহাস তুলে ধরতে অনন্য পরিকল্পনায় সাজানো হয়েছে জাদুঘরের গ্যালারিগুলো। প্রতিটি গ্যালারিতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী নানা স্মারক। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ নানা ডকুমেন্ট। একই সঙ্গে রয়েছে নানা স্মারক ডিজিটাল প্রযুক্তিতে তুলে ধরার ব্যবস্থা। নিদর্শন, আলোকচিত্র, চিঠিপত্র, ভিডিও চিত্র, দলিল, স্মৃতিচিহ্নের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলো। প্রাথমিকভাবে এখানে প্রায় ২৫ হাজার নিদর্শন রয়েছে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের নানা বিষয় জানাতে জাদুঘরে রয়েছে ইন্টার-অ্যাকটিভ স্পেস ও ওপেন এয়ার থিয়েটার। এ ছাড়া রয়েছে তিনটি সেমিনার হল ও ২৫০ আসনের একটি অডিটরিয়াম। তাতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক, চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও অন্যান্য পারফর্মিং আর্ট প্রদর্শন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষণার জন্য রিসার্চ অ্যান্ড আর্কাইভের স্থানও রাখা হয়েছে। প্রায় আড়াই বিঘা জায়গার ওপর নির্মিত এই জাদুঘরে তিনটি বেইসমেন্ট ও পাঁচটি ফ্লোর রয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ব্রোঞ্জের ম্যুরাল। রয়েছে বৃহৎ আকারের চারটি গ্যালারি। সেগুলোর আয়তন সব মিলিয়ে ২১ হাজার বর্গফুট। লিফটের তিনে উঠতেই এক নম্বর গ্যালারি। গ্যালারিটির নাম ‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’। এখানে দেখা গেল প্রাচীন বঙ্গের মানচিত্র, পোড়ামাটির শিল্প, টেরাকোটা ও নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন। ছবিসহ নানা নিদর্শনের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রেক্ষাপট। ধাপে ধাপে এই গ্যালারিতে উঠে এসেছে সত্তরের সাধারণ নির্বাচনের সময় পর্যন্ত নানা স্মারক। দ্বিতীয় গ্যালারির নাম ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ত্যাগ’। এখানে ঢুকতেই চোখে পড়ল বঙ্গবন্ধুর বিশাল আকৃতির আলোকচিত্র। সেটি ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের। পাশেই পর্দায় দেখানো হচ্ছে ভাষণটির ভিডিও চিত্র। তার সামনেই ছোট্ট কাচের বাক্সে রাখা ওই দিন সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমে পাঠানো আওয়ামী লীগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও ভাষণের রেকর্ড। এরপর কালো টানেলের পুরোটা জুড়ে রয়েছে ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার নানা নিদর্শন।
আলোকচিত্রে, ভিডিও চিত্রে নানাভাবে উঠে এসেছে কালরাতের ভয়াবহতা। এরপর মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় অস্থায়ী সরকার গঠনের নানা পর্বও তুলে ধরা হয়েছে। চতুর্থ গ্যালারিতে—নাম ‘আমাদের জয়, আমাদের মূল্যবোধ’। মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত নানা নিদর্শন দেখানো হয়েছে এখানে। একাত্তরের রণাঙ্গনে এক গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা বিলোনিয়া যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা প্রচলিত রীতির বাইরে গিয়ে নিয়েছিলেন ভিন্নধর্মী রণকৌশল। বিলোনিয়া যুদ্ধের এই কৌশল ‘স্যান্ড মডেল’ নামে পরিচিত। বিলোনিয়া যুদ্ধের সেই রণকৌশল মডেল একটি কাচের টেবিলে সাজানো রয়েছে। এই গ্যালারির একটি বিশেষ অংশে তুলে ধরা হবে বাংলার নারীদের ওপর পাকিস্তানি হায়েনাদের বর্বরতা আর নির্যাতনের চিত্র। প্রদর্শিত হয়েছে মিত্রবাহিনীর অংশগ্রহণ আর বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নির্মমতার নানা আলোকচিত্র। জাদুঘরের প্রবেশমূল্য ২০ টাকা। রবিবার বাদে সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীর জন্য খোলা থাকে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণ
ভারতের রাষ্ট্রপতি – ভি ভা গিরি
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী – শরণ সিং
মাকিন প্রেসিডেন্ট – রিচার্ড নিক্সন
মাকিন পররাষ্টমন্ত্রী – মি-রজাস’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী – এডওয়াথ হিথ
মিশরের প্রেসিডেন্ট – আনোয়ার সাদাত
জাতিসংঘ মহাসচিব – উ থান্ট
ইসরাইল ও বাংলাদেশ সম্পর্ক
বাংলাদেশ এবং ইসরায়েলের মাঝে কোন ধরনের কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক নেই।
বাংলাদেশ ইসরায়েলকে নৈতিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে না এবং বাংলাদেশী নাগরিকদের ইসরায়েলে ভ্রমণে সরকারী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সকল দেশ ভ্রমণের জন্য বৈধ। ২০০৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশী সাংবাদিক সালেহ চৌধুরীকে ইসরায়েলে প্রবেশের চেষ্টার দায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র সমর্থন করে এবং ইসরায়েলের “অবৈধভাবে প্যালেস্টাইন দখলের” সমাপ্তি দাবি করে।
বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র যেটি ইসরায়েলের সাথে সকল প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বাণিজ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যদিও উভয়ই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র ২০১৪ সালের এক জরীপে প্রকাশিত তথ্য থেকে দেখা যায়, কোন ধরনের কূটনৈতিক বা বাণিজ্যিক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২৫৭৭ ডলার মূল্যমানের পণ্যসামগ্রী ইসরায়েলে রপ্তানি করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে যেসব রাষ্ট্র বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয়, ইসরায়েল তাদের মধ্যে অন্যতম। আরব দেশসমূহ স্বীকৃতি দেয়ার আগেই ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ইসরায়েল সরকার এবং ইসরায়েলী নাগরিক সকলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশকে সমর্থন করেছিলো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নতুন স্বাধীনতা লাভকারী বাংলাদেশকে ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রধান করে, যা বাংলাদেশ সরকার নিরপেক্ষভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
বাংলাদেশের সংবিধানের যে সকল অনুচ্ছেদে সরকারি কর্মীদের বিষয় উল্লেখ আছে , সে সকল অনুচ্ছেদ গুলি হল-
২১ – নাগরিক ও সরকারী কর্মচারীদের কর্তব্য),
১১৩ – সুপ্রীম কোর্টের কর্মচারীগণ),
১১৬(ক) – বিচারবিভাগীয় কর্মচারীগণ বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন,
১৩৩ – অসামরিক সরকারী কর্মচারীদের বরখাস্ত প্রভৃতি) ও
১৩৫ – এর প্রত্যেকটি অনুচ্ছেদে সরকারি কর্মীদের “কর্মচারী” বলা হয়েছে ,
কারণ গণপ্রজাতন্ত্রে (People’s Republic) সরকারি কর্মচারী কখনোই কর্মকর্তা নয় , সকল কর্মের কর্তা হলো জনগণ। যদি কেউ সরকারি কর্মচারীকে কর্মকর্তা বলেন বা লেখেন তবে তিনি বা তারা সংবিধান লংঘনের অপরাধে অপরাধী হবেন।
“মুজিব কোট”–এ ছয়টি বোতাম থাকে কেন?
মুজিব কোটের ৬ টি বোতাম রপকার্থে প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “৬ দফা”। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক ছাত্র তার সহপাঠী তাজউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা দিতে গিয়েছিলেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে অনেক কাছ থেকে দেখলেন, কথাও বললেন দীর্ঘক্ষণ। কথা শেষে উঠে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু যখন তার কালো কোটটি গায়ে জড়াচ্ছিলেন তখন ওই ছাত্র লক্ষ্য করলেন কোটে ৬টি বোতাম রয়েছে। যা এ ধরনের অন্য কোটের বোতামের চেয়ে কম। এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কোটের বোতাম ৬টি কেন? উত্তরে বঙ্গবন্ধু তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘এমন প্রশ্ন এর আগে আমাকে আর কেউ করেনি। তুই প্রথম। এই ৬টি বোতাম আমার ঘোষিত ৬ দফার প্রতীক।’ আর এ কারণেই একটি আদর্শ মুজিব কোটের প্রতিটিতে বোতামের সংখ্যা থাকে ৬টি।
সত্য মামলা আগরতলা !!
ছোটকাল থেকেই পড়ে আসছি, শুনে আসছি, ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামী করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান একটি সরকার উৎখাত ও পাকিস্তানের এক অংশ তথা বাংলাদেশকে স্বাধীন করার ষড়যন্ত্রের জন্য যে মামলা করেছিলেন সেটা ছিল মিথ্যা। প্রখ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদের ভাষায়:
আমাদের জাতীয় স্বার্থেই আমরা শিশুদের কিছু কিছু ভুল বা অসত্য তথ্য শেখাই। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হল সেরকমই একটি সত্য মামলা যা শিশুতোষ বইতে মিথ্যা বলে প্রকাশ করা হয়। তিনি বললেন, সেই সময় সংবাদ সংগ্রহের জন্য তিনি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাস করেছিলেন, ষড়যন্ত্রটি আদতেই কি সঠিক ছিল? বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ষড়যন্ত্রটি সঠিক ছিল। এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হকের বড় ভাই আমিনুল হক বলেছিলেন, তিনি তার ভাইকে (সার্জেন্ট জহুরুল হক) জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছিলেন, ঘটনা সঠিক ছিল। কিন্তু সকল ঘটনার জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সেই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সেই সময়ের সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও বর্তমানের সংসদের ডেপুটি স্পিকার জনাব শওকত আলী আমাদের মহান সংসদেই ঘোষণা করেছিলেন, এ ঘটনা (আগরতলা মামলা) পুরোপুরি সত্য ছিল। শুধু তাই নয়, ২০১১ সালে তার লেখা ‘সত্য মামলা আগরতলা’ বইয়ের ভূমিকাতেই তিনি বলেন,
“জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আমরা যাঁরা মামলাটিতে অভিযুক্ত ছিলাম, ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দটি তাদের জন্য খুবই পীড়াদায়ক। কারণ আমরা ষড়যন্ত্রকারী ছিলাম না। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র পন্থায় বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে আমরা বঙ্গবন্ধুর সম্মতি নিয়ে একটি বিপ্লবী সংস্থা গঠন করেছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, একটি নির্দিষ্ট রাতে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমরা বাঙালিরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সবকটি ক্যান্টনমেন্টে কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিদের অস্ত্র কেড়ে নেব, তাদের বন্দী করব এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করব”।
প্রথমা প্রকাশন থেকে ২০১১ সালে প্রকাশিত বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ২০৭। তবে পঞ্চাশ পৃষ্ঠারও বেশি হল সংযোজনী ও পরিশিষ্ট। বইটির প্রথম ৮৪ পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের মানুষের উপর পাকিস্তানিদের বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এসব পৃষ্ঠায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পটভূমিকার আভাষ পাওয়া যাবে। কিন্তু ১১২ পৃষ্ঠায় গেলে পাওয়া যাবে ঘটনার মূল অংশ। এর পর ১৪২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়লে মামলার তদন্ত, বিচার ও বিচার প্রক্রিয়ার পরিণতির কথা জানা যাবে। সরকারি কাগজপত্রে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যরা’ নাম থাকলেও পরিকল্পিতভাবে মামলাটিকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে প্রচার করে পাকিস্তানি শাসকগণ বাঙালিদের ভারত বিরোধী মনোভাবকে উসকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অবস্থা এমন হয়েছিল যে আইয়ুব খান শুধু বঙ্গবন্ধুকেই নয়, অভিযুক্ত ৩৫ জনকেই ছেড়ে দিতে ও মামলাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল। আর এর পরপরই যে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, স্বৈরাচারী আইয়ুব খানকেই সে অভ্যুত্থান ক্ষমতাচ্যুতই শুধু নয়, পাকিস্তানচ্যূত পর্যন্ত করেছিল।
আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা, সেই ১৯৬১ সাল থেকেই কতিপয় দেশ প্রেমিক বাঙালি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অফিসার বাংলাদেশকে সশস্ত্র পন্থায় স্বাধীন করার জন্য রীতিমত গোপন সংস্থা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছিল। এ জাতীয় কাজের অগ্রভাগে ছিলেন নৌবাহিনীর কয়েকজন সিনিয়র বাঙালি অফিসার যাদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন আর্মি মেডিকেল কোরের ক্যাপ্টেন ডা. খুরশীদ উদ্দীন আহম্মদ যিনি প্রেষণে নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন ও লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন (পৃষ্ঠা-৯৮)। চিরায়ত বঞ্চনার ফলেই পাকিস্তানের সশস্ত্র-বাহিনীতে বাঙালি অফিসার ও সৈনিকের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে মাত্র দুটি ব্যাটালিয়ন ছিল। সম্ভবত তখন পাঞ্জাব ও বেলুচ রেজিমেন্টে ৩০টি করে ব্যাটালিয়ন এবং সম্ভবত ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টে ২০টি ব্যাটালিয়ন ছিল। বাঙালির জন্য ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যে দুটি ব্যাটালিয়ন ছিল, সেখানেও শতকরা ৫০ ভাগ পাঞ্জাবি ছিল। প্রকৃতপক্ষে গোটা পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীতে পাঞ্জাবিদের সংখ্যা ছিল শতকরা ৮০ ভাগের বেশি এবং বাঙালির সংখ্যা ছিল শতকরা দুই ভাগের কাছাকাছি।(পৃষ্ঠা-৫২) সিনিয়র বাঙালি অফিসারদের মধ্যে জ্যেষ্ঠিতম বাঙালি সেনা কর্মকর্তা ছিলেন জনাব আতাউল গনি ওসমানী। তবে কেবল বাঙালি হওয়ার জন্যই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাকে পরবর্তী পদোন্নতি দেয়া হয়নি।
সশস্ত্র পন্থায় বাংলাদেশকে স্বাধীন করার সর্বপ্রথম যে পরিকল্পনা বা সংগঠনটি তৈরি হয়েছিল তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীর লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি সেনাবাহিনীর মেজর পদতুল্য নৌ কর্মকর্তা ছিলেন। জনাব শওকত আলী ১৯৬৬ সালের জুন মাসে কুমিল্লায় কর্মরত থাকাকালীন আর্মি রিক্রুটিং মেডিকেল অফিসার ক্যাপ্টেন ডা. সামসুল আলমের কাছ থেকে এ পরিকল্পনার কথা জানতে পারেন (পৃষ্ঠা-৯৩)। লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য উদগ্রীব থাকলেও একটি সফল অভ্যুত্থান করার মতো মেধা-জ্ঞান ও সাংগঠনিক দক্ষতা কিংবা যোগাযোগ পদ্ধতি তার জানা ছিলনা। তার পরিকল্পনার সিংহভাগ সেনাবাহিনীরি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের নিয়ে হলেও তিনি তাদের সাথে কার্যত কোন যোগাযোগই করতে পারেননি । তবে তিনি মনে করতেন যে সবাই তার মতো করে কাজ করবে। পরবর্তীতে ক্যাপ্টেন শওকত আলী, ডা. ক্যাপ্টেন সামসুল আলম, ক্যাপ্টেন খোন্দকার নাজমুল হুদা ও আলীমসহ চারজন বাঙালি সেনা কর্মকর্তা কুমিল্লার দাউদকান্দি ডাকবাংলোতে বসে এ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করে ধীরে চলার নীতি অবলম্বন করেন। তারা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ধরা পড়ার ভয়ে আপাতত তাদের অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা বন্ধ রাখারও সিদ্ধান্ত নেন।(পৃষ্ঠা-১০৪)এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য, সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পরিকল্পনার সাথে প্রথম দিকে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোন সংযোগই ছিল না। পরিকল্পনাকারীগণ সর্বপ্রথম এর সাথে অবসর প্রাপ্ত কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীকে সম্পৃক্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের বিষয়টিতে উৎসাহিত ছিলেন না। বরং নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলনের ফলে স্বায়ত্ত শাসন আদায়ের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু কোন বিপ্লবই রাজনৈতিক নেতৃত্বের বাইরে ফলপ্রসূ ও স্থায়ী হতে পারে না। তাই দাউদকান্দির বৈঠকে শেখ মুজিবুর রহমানকেই সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে গ্রহণ করার হয়েছিল:
“রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিষয়ে আমরা সবাই একমত ছিলাম যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই আমাদের রাজনৈতিক নেতা এবং তার নেতৃত্বেই স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। যদিও আমাদের মধ্যে কেউই তখন পর্যন্ত মুজিব ভাইকে সামনাসামনি দেখিনি বা তাঁর সঙ্গে কথা বলিনি। তা ছাড়া ওই মুহূর্তে তিনি কারাগারে ছিলেন।(পৃষ্ঠা-১০৬)”
ক্যাপ্টেন শওকত আলী ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে করাচিতে মালির ক্যান্টনমেন্টের অর্ডিন্যান্স স্কুলের ইন্সট্রাক্টর হিসেবে বদলী হয়ে যায়। কিন্তু এর মাঝে অন্যরা কোন না কোন ভাবে তাদের পরিকল্পনা চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেমের অতি আগ্রহের ফলেও অন্যান্যদের ধীরে চলা নীতির জন্য পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে পারছিল না। ইতোমধ্যেই সেনা গোয়েন্দারা বিষয়টি জেনে ফেলেছিল। আইএসআই ১৯৬৬ সালের শুরুতে বিপ্লবী সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছিল। আইএআই সঙ্গে সঙ্গে মোয়াজ্জেম গ্রুপের মধ্যে চর ঢুকিয়ে দিয়েছিল এবং সেই চর বিপ্লবীদের একজন হিসেবে ১৯৬৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোয়াজ্জেমের সঙ্গে কাজ করেছিল। চর কর্তৃক সব বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানার পরই পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামীদের গ্রেফতার কার্যক্রম শুরু করেছিল।(পৃষ্ঠা-১০৪)
পরবর্তী কার্যক্রমগুলো সবার জানা। বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামী করে ৩৫ জন অভিযুক্তের বিচার শুরু হয় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের একটি অফিসার্স মেসে। অভিযুক্তদের সেনা আইনে বিচারের পায়তারা চললেও পরে দণ্ড বিধির দেশদ্রোহিতার অপরাধে বিচার করা হয়। গঠন করা হয় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জাস্টিস এস এ রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। বেসামরিক আদালত হলেও তার নিরাপত্তা ও পদ্ধতি ছিল সামরিক ধাঁচের। বিচার চলাকালে দুই জন অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হক ও ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হককে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গার্ড কমান্ডার হাবিলদার মঞ্জুর হোসেন গুলি করে হত্যা করেন। এক দিকে বঙ্গবন্ধুর মতো নেতাকে দেশদ্রোহিতার জন্য ফাঁসিতে ঝোলানোর পায়তারা অন্যদিকে অভিযুক্তদের বিনা বিচারে হত্যা করা – সব কিছু মিলে সারা বাংলা ফুসে উঠল। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান গণ-রোষে পড়ে ঢাকা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের বাসা থেকে নাইট ড্রেস পরা অবস্থায় পালিয়ে তেজগাঁ বিমান বন্দরে আশ্রয় নেন। লাহোর-গামী প্রথম বিমানটি ধরে তিনি সেই যে প্রাণ নিয়ে পাকিস্তান পলায়ন করেন, বিচার তো দূরের কথা ঢাকাভিমুখী হওয়ার চিন্তাও আর কোন দিন করেননি। (পৃষ্ঠা-১৪৬) তবে বিচারের শুরু থেকেই বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু তার দূরদর্শিতায় সব কিছুই আঁচ করতে পেরেছিলেন। পাকিস্তানি শাসককুল যে বাঙালি নেতৃত্বের বিচার করার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ইতোমধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং তাদের অবস্থা তলে তলে ছিল ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচির’ অনুরূপ- তা বঙ্গবন্ধু সহজেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই বিচারের ফলাফল নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথাই ছিল না। বরং তিনি এই মামলায় পাকিস্তানিদের ভরাডুবির পর কি হবে সে নিয়েই পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়:
“এখান থেকে বের হয়ে আমি জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়ার জন্য একটা নির্বাচন করব। সেই নির্বাচনে আমরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করব। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের হাতে ক্ষমতা দেবে না। তখনই একটা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে। সেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থেকো।(পৃষ্ঠা-১৩৩)”
বলা-বাহুল্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল মাত্র দু বছরেরও কম সময়ের মধ্যে। সেই মুক্তিযুদ্ধের পূর্বের উপাখ্যানই ছিল আগরতলা নামের সেই সত্য মামলা যেখানে কতিপয় বাঙালি সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার ও সৈনিক বেসামরিক ও কিছু রাজনৈতিক নেতাকে সাথে নিয়ে সহিংস অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বাধীন করতে চেয়েছিল আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমিকে। কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু তাতে কি? আমরা গর্ব অনুভব করতে পারি এ ভেবে যে, আমাদের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেলেও বাঙালি জাতি আমাদের গোপন তৎপরতার কথা জেনে উৎসাহিত হয়েছিল এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতার দিকে দ্রুত ধাবিত হয়েছিল।(পৃষ্ঠা-৯৯)
আসুন আমরা আগরতলা ষড়যন্ত্র নামের সেই সত্য মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানি ও আমাদের শিশুদের প্রকৃত সত্যটি জানাই। আগরতলা মামলাকে ষড়যন্ত্র নয়, স্বাধীনতার প্রথম সশস্ত্র পরিকল্পনা বলে স্বীকৃতি দেই; গর্ববোধ করি।
‘‘অসমাপ্ত জীবনী‘‘ বইটি সম্পর্কে কিছু বলেন।
‘‘অসমাপ্ত জীবনী‘‘ বইটি সম্পর্কে কিছু বলেন। এই প্রশ্নে জন্য একটি সংগৃহিত রিভিউ শেয়ার করলাম। আপনার জানা জ্ঞানের সাথে এটির সমন্বয় করতে পারেন।
বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত জীবনী’র অসমাপ্ত রিভিউ
বঙ্গবন্ধু একজন নেতা। তিনি কোনো সাহিত্যিক কিংবা কবিও নন। তবে ৭ মার্চে ভাষণের পর তাকে কবি বলতে কারও কোনো আপত্তি থাকারো কথা নয়। কবিতার ছন্দে ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। তবে সাহিত্যিক এবং কবির মধ্যে একটি মিল আছে। সেই বিখ্যাত উক্তির মতো করেই বলা যায়, Political Leaders are like poets, born, not made.
যাইহোক। বঙ্গবন্ধু নিজের লেখা আত্মজীবনী নিয়ে অনেকের কথাই শুনি। মন্তব্য কার কি কিংবা কি ধরনের সে বিষয়ে আমি যাবো না। তবে তার লেখায় তিনি নিজে যে পুনরায় প্রাণ পেয়েছেন সে বিষয়ে সন্দেহ নাই।
আমার বিষয় শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি নিয়ে। আত্মজীবনী কেমন হয়? সে বিষয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। আত্মজীবনী মানে নিজের ঢোলটা বেশি পেটানো। নিজেকে ফুটিয়া তোলা। নিজের ভালো দিকগুলা সবার সামনে তুলে বলা, ‘এই হইলাম আমি’। সবকিছুর উর্ধ্বে আমিই ছিলাম। আমি হইলাম আসল হিরো। তবে সত্যি কথা বলতে হইলো, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু হিরো নন। হিরো হইলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। অধিকাংশ অধ্যায় জুড়েই সোহরাওয়ার্দীর কথাই বলতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তার রাজনৈতিক জীবনে শহীদ সাহেবের প্রভাব যে কতটা স্পষ্ট তা বইটি পড়লেই ঝকঝক হয়ে উঠবে।
আত্মজীবনীর শুরুতেই তিনি বলে ফেলেন, ‘…ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হলো। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।…’
শহীদ সাহেবের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা ফুটে ওঠে এই লাইনগুলোর মধ্যে দিয়েই।
বইয়ে নিজ পরিবারের পরিচয়পর্ব থেকে শুরু করে শহীদ সাহেবের সঙ্গে পরিচয় পর্বটিও স্পষ্ট উল্লেখ করেছে বঙ্গবন্ধু। শহীদ সাহেবের সঙ্গে তার পরিচয় হয় ১৯৩৮ সালে। একসঙ্গে দুই নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ আসেন। সেখানেই পরিচয় পর্ব দিয়ে রাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র শেখ মুজিবুর রহমানের যাত্রা শুরু। এরপর সেই কলেজ ছাত্র ধীরে ধীরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
পাকিস্তান আন্দোলনের বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা স্পষ্ট। সেসময়কার মুসলমানদের একমাত্র দাবি ছিল ‘পাকিস্তান’ নামে আলাদা রাষ্ট্র। আর সেই দাবী প্রতিষ্ঠায় যে ভূমিকা তার ছিল তা তিনি খুব সহজেই বলে গেছেন। এমনকি সেখানেও শহীদ সাহেবের ভূমিকার স্পষ্ট বর্ণনা দেন বঙ্গবন্ধু। তবে এসব বর্ণনা তার নিজের ব্যক্তিগত মতামত হিসেবেই ধরে নিতে হবে।
আত্মজীবনী গ্রন্থখানি সম্পাদনা কাজে জড়িত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। একইসঙ্গে বইটির ভূমিকা লিখেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ভূমিকাটি তিনি লিখেছেন জেলে থাকা অবস্থায় ২০০৭ সালে। এ নিয়ে আমার একখানা মতামত হলো, নেতারা সবসময় জেলে বসেই লেখতে পছন্দ করেন। নিজের মতো করে সময় পান। যা তারা লেখালেখিতে হয়তো ব্যয় করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিকার এক জায়গায় বলেছেন, ‘এ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত আত্মজীবনী লিখেছেন। ১৯৬৬-৬৯ সালে কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দি থাকাকালে একান্ত নিরিবিলি সময়ে তিনি লিখেছেন।’ বলাই যায়, বঙ্গবন্ধুও আত্মজীবনী লেখেছেন কারাবন্দি থাকা অবস্থায়।
যাইহোক, যে কথা বলতে চেয়েছিলাম সেটা হলো বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী গ্রন্থে বহুবার চৌধুরী সাহেবের প্রসঙ্গ এসেছে। এই চৌধুরী সাহেব হলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। সম্পাদনার ভালো দিকটি হলো, সম্পাদক চাইলে বইয়ে এই বিতর্কিত লোকটির চরিত্র ম্যানুপুলেশন করতে পারতেন। কিন্তু সেটা হয় নাই। বরং স্বচ্ছভাবেই চৌধুরী সাহেবের কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন তার কথা প্রথম আসে ‘অল বেঙ্গল মুসলিম ছাত্রলীগ’- এর সভাপতি ওয়াসেক সাহেবের সূত্র ধরে। এই ওয়াসেক সাহেবের সঙ্গে ফজলুল কাদের চৌধুরীর সব সময় বিরোধ লেগে থাকতো। ওয়াসেক সাহেব একচেটিয়ে রাজনীতি করতে চাইতেন। তাই তার সঙ্গে বিরোধ। একবার এক গন্ডগোলে চৌধুরী সাহেবের দলকে বঙ্গবন্ধু সমর্থন জানিয়ে প্রতিবাদেও অংশ নেন। এমনকি চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে ভারত ঘুরার বর্ণনাও আছে বইটিতে। চৌধুরী সাহেব যে পুরানো ধনী সেটিও বোঝা যায় বঙ্গবন্ধুর বর্ণনায়। তবে চৌধুরী সাহেব সম্পর্কে এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু মন্তব্য করেন, ‘চৌধুরী সাহেব খুবই স্বার্থপর হয়ে ওঠেন এবং একগুঁয়েমি করতেন, সেজন্য যারা তাকে চট্টগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, পরে তারা সকলেই তাঁকে ত্যাগ করেন।’
রাজনৈতিক কুটচাল, পার্টি ম্যানুপুল্যাশন, টাকার খেলা, দল বদলানো, মানুষের নতুন চেহারা উন্মোচন এসবই পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে। সঙ্গে আছে দূর্ভিক্ষ এবং হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। দেশ ভাগ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটও উঠে আসে বইয়ে। শুধু তাই নয়, কলকাতা ও সিলেট নিয়ে যে রাজনীতি ব্রিটিশরা করেছে সে বর্ণনাও আছে। কলকাতাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী না করে ভারতের সীমানায় দিয়ে দেওয়াটা হঠকারিতার সামিল বলেই বোঝা যায়। অন্যদিকে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিম পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের কথাও তিনি বলেছেন। সেখানেও মূল নায়ক সোহরাওয়ার্দী। বঙ্গবন্ধু এ প্রসঙ্গে বলেন,
‘পাকিস্তান হওয়ার সাথে সাথেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে জনাব সোহরাওয়ার্দীর বিরুদ্ধে দিল্লিতে এক ষড়যন্ত্র শুরু হয়। কারণ, বাংলাদেশ ভাগ হলেও যতটুকু আমরা পাই, তাতেই সিন্ধু, পাঞ্জাব, সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানের মিলিতভাবে লোকসংখ্যার চেয়ে পূর্ব পাকিস্তানের লোকসংখ্যা বেশি। সোহরাওয়ার্দীর ব্যক্তিত্ব, অসাধারণ রাজনৈতিক জ্ঞান, বিচক্ষণতা ও কর্মক্ষমতা অনেককেই বিচলিত করে তুলেছিল। কারণ, ভবিষ্যতে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চাইবেন এবং বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কারও থাকবে না।’
শুধু রাজনীতি কিংবা নিজের ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ বাদেও কখনও কখনও বঙ্গবন্ধুর ভেতরের কবি সত্ত্বাও জেগে উঠতে দেখা গেছে এ গ্রন্থে। তাজমহলে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভেতরের রোমান্টিকতার প্রকাশ পেয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন,
‘সূর্য যখন অস্ত গেল, সোনালী রঙ আমাশে ছুটে আসছে। মনে হল, তাজের যেন আর একটা নতুন রূপ। সন্ধ্যার একটু পরেই চাঁদ দেখা দিল। চাঁদ অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসছে আর সাথে সাথে তাজ যেন ঘোমটা ফেলে দিয়ে নতুন রূপ ধারণ করেছে। কি অপূর্ব দেখতে! আজও একুশ বৎসর পরে লিখতে বসে তাজের রূপকে আমি ভুলি নাই, আর ভুলতেও পারব না।’ প্রতিটি মানুষের মনে কবি বাস করে। কথাটি হয়ত ঠিক। অপরূপ মায়া ও রোমান্স উঠে এসেছে লাইনগুলোতে। যাইহোক, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিশক্তিরও বেশ প্রশংসা করতে হয়। প্রতিটি মানুষের নাম। এমনকি কখনও কখনও সময়ও উল্লেখ করেছেন। প্রতিটি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তিনি বর্ণনা করেছেন।
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ একটি আত্মজীবনী গ্রন্থ। যে গ্রন্থখানি লেখেছেন একজন নেতা। নেতার লেখায় রাজনীতি উঠে আসাই স্বাভাবিক। তবে অনেক সাহিত্যবোধ্যারা তাকে সাহিত্যিকের মর্যাদায় দিয়ে ফেলছেন। যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতেই পারে। বঙ্গবন্ধু একজন নেতা। বাংলাদেশ স্বাধীকার আন্দোলনের প্রধান নেতা। এবং তার রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী একজন নেতার বেড়ে ওঠার গল্প। তার রাজনৈতিক দর্শন ও ভাবনার মিশেলে বাংলাদেশের তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে এ গ্রন্থে। ভাষা ঝরঝরে। বাক্য সাধারণ। শব্দ নির্বাচনে সাদামাটা। কোনো সাহিত্য করার জন্য এ জীবনী তিনি লেখতে বসেননি। নেহায়েত বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী এবং স্ত্রী রেণুর অনুরোধে নিজের জীবন লেখতে বসেছিলেন কারাবন্দী অবস্থায়। যা আজ আমাদের সামনে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ হাজির হয়েছে।
অতএব আমার এ লেখাও একটি অসমাপ্ত রিভিউ হিসেবেই আপনারা নিতে পারেন। এটি কোনো ন্যারেটিভ রিভিউ নয়। নিছক সাদামাটা একটা রিভিউ
.
Disclaimer and Acknowledgement:
এই আর্টিকেলের সমস্ত লেখা বিভিন্ন ব্লগ, ফেসবুক, ওয়েবসাইট, বইপুস্তক থেকে সংগৃহীত।