প্রথম আলো, ০৫ এপ্রিল ২০১৯
৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দরজায় কড়া নাড়ছে। এ সময় নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। কেননা, এই বিসিএসে চার লাখের বেশি প্রার্থী আবেদন করেছেন, যা পিএসসির ইতিহাসে রেকর্ড। কেমন হবে এই বিসিএসের প্রস্তুতি, তা জানাচ্ছেন ৩৭তম বিসিএসে প্রশাসনে প্রথম স্থান অধিকারী তকী ফয়সাল। এবারের বিষয় গাণিতিক যুক্তি, মানসিক দক্ষতা ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা—বিসিএস পরীক্ষার্থীদের অন্যতম ভীতি ও দুশ্চিন্তার বিষয়। কিন্তু এতে পিছপা হলে চলবে না; বরং ভয়কে জয় করে নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে। আর পরীক্ষার হলে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রেখে ঠান্ডা মাথায় এ অংশের উত্তর করতে হবে। তাহলে আশা করা যায় সাফল্য আসবেই।
গাণিতিক যুক্তি বিষয়ে প্রস্তুতির শুরুতেই সিলেবাস ও বিগত বছরের প্রশ্নাবলি বিশ্লেষণ করতে হবে। বিসিএস প্রিলিমিনারি সিলেবাসে গাণিতিক যুক্তি অংশটি পাঁচটি ভাগে ভাগ করা আছে এবং ১৫ নম্বরের মানবণ্টনও সেভাবেই সন্নিবেশিত হয়েছে। তাই বিক্ষিপ্তভাবে প্রস্তুতি না নিয়ে সিলেবাস ধরে বিষয় অনুসারে নিজের দক্ষতা ও দুর্বলতার দিকগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সে অনুযায়ী সুশৃঙ্খলভাবে পরিকল্পনা সাজিয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে অনুশীলন করে যেতে হবে। সিলেবাসের প্রথম তিন ভাগের বীজগণিত ও পাটিগণিত এবং চতুর্থ ভাগের জ্যামিতি মূলত মাধ্যমিক লেভেলের গণিতের সিলেবাস থেকে সাজানো। আর পঞ্চম ভাগ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের সমন্বয়। তাই গণিতচর্চার ক্ষেত্রে মাধ্যমিক পর্যায়ের বোর্ড বইগুলো ধরেই এগোতে হবে। এরপর বাজারের যেকোনো গাইড থেকে বিষয় অনুযায়ী নিয়মিত এমসিকিউ চর্চা করে যেতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে বিগত বিসিএসের প্রশ্ন, পিএসসির নন-ক্যাডারের প্রশ্ন, বিভিন্ন ব্যাংক ও সরকারি চাকরির প্রশ্নগুলোও বুঝে বুঝে সমাধান করতে হবে।
প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখতে হবে গণিতচর্চার জন্য। সমাধান দেখে মুখস্থ নয়; বরং নিজে নিজে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। গণিতের ক্ষেত্রে যে যত ঠেকে ঠেকে শিখবে, তার দক্ষতা তত বাড়বে। আর বেশি বেশি অনুশীলন করে দক্ষতা বাড়াতে পারলে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার স্বল্পসময়ের মধ্যে সঠিক উত্তর বের করা সহজ হয়ে যাবে। আটকে গেলে হাল ছেড়ে দেওয়া চলবে না; ধৈর্য ধরে নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে।
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা অংশের ক্যালকুলেশনে অনেক সময়ই অসতর্কতাবশত ভুল হয়ে যায়; আর এতে অনর্থক নেগেটিভ মার্ক গুনতে হয়। যেহেতু প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যায় না, তাই হাতে ক্যালকুলেশনের ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং বাসায় বেশি বেশি অভ্যাস করতে হবে।
এবার আসি মানসিক দক্ষতা অংশের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রথমে বিগত বছরগুলোর প্রিলিমিনারি ও রিটেনের সব প্রশ্ন বুঝে বুঝে সমাধান করতে হবে। এরপর সিলেবাসের ছয়টি অংশ থেকে অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাজারের যেকোনো গাইড, মানসিক দক্ষতাবিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও বই ফলো করা যেতে পারে। সিলেবাসের ‘ভাষাগত যৌক্তিক বিচার’ ও ‘সমস্যা সমাধান’ অংশ দুটি প্রশ্ন ঠিকভাবে পড়ে ও বুঝে অনুশীলন করতে হবে; ‘বানান ও ভাষা’ অংশটি বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট; ‘যান্ত্রিক দক্ষতা’ অংশে মূলত সঠিক অবজারভেশন পাওয়ার টেস্ট করা হয়; আর ‘স্থানাঙ্ক সম্পর্ক’ ও ‘সংখ্যাগত ক্ষমতা’ অংশে হিসেবের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
সাধারণ বিজ্ঞান অংশের ১৫ নম্বরের মধ্যে ভৌত, জীব ও আধুনিক বিজ্ঞানের প্রত্যেক ভাগ থেকে সাধারণত ০৫ নম্বরের প্রশ্ন আসে। এ অংশের প্রশ্নগুলো মাঝেমধ্যে পরীক্ষায় কনফিউশন তৈরি করে। তাই অবশ্যই এ অংশ ভালোমতো বুঝে বুঝে পড়তে হবে ও সঠিক উত্তর করতে হবে। এ বিষয়ে ভালো দক্ষতা অর্জনে নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বই এবং বাজারের কোনো একটা গাইড থেকে বিষয় অনুসারে প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। সঙ্গে অবশ্যই বিগত বিসিএস, পিএসসির নন-ক্যাডার, ব্যাংক ও সরকারি চাকরির প্রশ্নাবলি ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে।
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি অংশের মানবণ্টনে কম্পিউটারের ওপর ১০ নম্বর এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে ০৫ নম্বর বরাদ্দ আছে। এ ক্ষেত্রেও সিলেবাস ও বিগত বছরের প্রশ্নাবলি বিশ্লেষণ করে প্রস্তুতি নিতে হবে। বিগত বিসিএসের প্রশ্ন, পিএসসির নন-ক্যাডারের প্রশ্ন, বিভিন্ন ব্যাংক ও সরকারি চাকরির প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটারের সাংগঠনিক ও ব্যবহারিক বিষয়ের ওপর ভালো জ্ঞান এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে বিভিন্ন প্রায়োগিক বিষয়ের ওপর ভালো দখল থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের টেক্সট বুক এবং বাজারের যেকোনো গাইড থেকে টপিক্স অনুসারে পড়া যেতে পারে। আর সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে পত্রিকা থেকে নোট রাখা যেতে পারে। আসলে কৌশলী হয়ে প্রস্তুতি নিলে যেকোনো কঠিন বিষয়ও সহজ হয়ে যায়।