বিসিএস প্রিলিমিনারি টেস্টের প্রার্থীদের জন্য শেষ সময়ের কয়েকটি ব্যক্তিগত পরামর্শ:
❖ পরামর্শ- ১
আমার কাছে মনে হয়, BCS Preliminary Test is a test of intelligence rather than merit.
এটি যতটা না মেধার তার চেয়ে বেশি বুদ্ধির পরীক্ষা।
যেমন: পরীক্ষার হলে আপনার পাশে যে প্রার্থী বসেছেন, তিনি কতটুকু নির্ভরযোগ্য সেটি যাচাই করতে পারাও একটা যোগ্যতা! এছাড়া এবারের প্রশ্নটি সহজ হয়েছে নাকি কঠিন হয়েছে সেটি অনুমান করতে পারা সবচেয়ে বড় যোগ্যতা!!
❖ পরামর্শ - ২
অনেকেরই প্রশ্ন, "কতটি উত্তর দাগাবো?" সহজ জবাব হলো, যে কটি প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিতভাবে পারেন, তার সবগুলোই দাগাবেন। আর যেটি একদমই পারেন না, সেটি দাগানোর প্রয়োজন নেই।
#তবে উত্তর দাগানোর ক্ষেত্রে নিচের তিনটি মেথড অনুসরণ করতে পারেন।
ক. যে প্রশ্নের উত্তর জানা আছে, সে প্রশ্নের নম্বরের উপর একটি টিক চিহ্ন (✓) দিয়ে উত্তরপত্রের বৃত্ত ভরাট করুন। (অবশ্যই প্রশ্নপত্রে সঠিক উত্তরের উপর টিক মার্ক দেবেন না)
খ. যে প্রশ্নের উত্তর করা আপনার পক্ষে অসম্ভব তথা যেটার উত্তর মোটেও জানা নেই, সেই প্রশ্নের নম্বরের উপর সাথে সাথে একটি ক্রস (×) চিহ্ন দিন।
এটা নিয়ে গবেষণা করে আর এক সেকেন্ড সময়ও নষ্ট করার দরকার নেই।
(খুবই কঠিন, এমন ৫০/৬০ টি প্রশ্ন দ্রুত এড়িয়ে গেলে কোনো সমস্যা হবে বলে আমার মনে হয় না; এতে বরং সময় সাশ্রয় হয়।)
গ. যে প্রশ্নগুলো কনফিউজড মনে হয়, সেই প্রশ্নের নম্বরগুলোতে একটি দাগ (/) দিয়ে রাখুন। সব সঠিক উত্তর দাগানোর পরে এবার এই কনফিউজডগুলো নিয়ে একটু গবেষণা করুন।
মন থেকে সিক্সটি পার্সেন্ট ইতিবাচক সাড়া পেলে বৃত্ত ভরাট করুন। আর তা না হলে বাদ দিন।
❖ পরামর্শ- ৩
দুই পদ্ধতিতে প্রশ্নের উত্তর ভরাট করতে পারেন।
ক. প্রশ্নপত্রের শুরু থেকে উত্তর করে ক্রমান্বয়ে শেষ করা। অথবা,
খ. যে বিষয়গুলোতে নিজের অবস্থান ভালো মনে করেন সেই বিষয়গুলোর উত্তর আগে ভরাট করে ফেলা। (ধরুন, কেউ গণিত বা ইংরেজিতে দুর্বল হলে, তার উচিত হবে সবশেষে এদের উত্তর করা।)
❖ পরামর্শ- ৪
প্রস্তুতিপর্ব শেষ।
এখন পুরোপুরি তকদিরে বিশ্বাস করুন। মহান প্রভু আপনার রিজিকের ফয়সালা যেখানে নির্ধারিত করে রেখেছেন, আপনি অবধারিতভাবে সেখানেই গমন করবেন। অনেক তুখোড়, বাঘাবাঘা প্রার্থীকেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রিলিতে ফেল করতে দেখেছি।
আবার দুর্বল বা সামান্য সময়ের প্রস্তুতি নিয়েও প্রিলি উত্তীর্ণ হয়েছেন, এমনও বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে।
#প্লিজ, মাত্রাতিরিক্ত সিরিয়াস হবেননা। নিজেকে পুরোপুরি শান্ত রাখুন। জাস্ট একটা মডেল টেস্ট দিতে যাচ্ছেন, এমনটা ভাবুন।
আপনি আপনার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। বাকিটা নিঃশর্তে আল্লাহ্র ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিন।
❖ পরামর্শ- ৫
সবাই প্রিলি টিকবেনা।
এটাই সত্য যে রেওয়াজ অনুযায়ী অন্তত ৯৩/৯৪ শতাংশ প্রার্থী অকৃতকার্য হবে।
অতএব কারো পরীক্ষা যদি অপ্রত্যাশিতভাবে খারাপ হয়ে যায়, ভেঙ্গে পড়বেননা।
Keep hope alive. ঠিক পরীক্ষা দিয়ে এসেই আগামী ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য ৪৩ তম বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আদাজল খেয়ে নেমে পড়ুন। ব্যর্থতাকে সাফল্যের খুঁটি বানিয়ে ফেলুন। #আমি এমন একজনের উদাহরণ দিতে পারব, যিনি প্রথম বিসিএসে প্রিলিতে ফেল করেছেন, কিন্তু দ্বিতীয় বিসিএসে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন।
❖ পরামর্শ-৬
যারা প্রিলিমিনারির বৈতরণী পার হতে পারবেন বলে আশাবাদী হবেন তারা পরদিন থেকেই রিটেন পরীক্ষার জন্য ধুমিয়ে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করবেন। মনে রাখবেন, রিটেন পরীক্ষায় ভালো নম্বর তুলতে পারাই বিসিএসে সাফল্যের গোপন রহস্য। এক্ষেত্রে চাইলে বিভিন্ন কোচিংয়ের সহযোগিতা নিতে পারেন। পাশাপাশি যে সকল বিষয়ে নিজেকে খুব দুর্বল মনে করেন, সেগুলোর জন্য অনলাইনে/জুম অ্যাপে বিভিন্ন অভিজ্ঞ শিক্ষকের সহায়তা নিতে পারেন।
❖ পরামর্শ-৭
এখনই #পরীক্ষার প্রবেশপত্র, #applicant's কপি, #জাতীয় পরিচয়পত্র, #সিট প্ল্যান, #ভালো মানের দুটি কালো বলপেন, #একটি পেন্সিল, #রাবার, #মাস্ক, #ছোট হ্যান্ড স্যানিটাইজার, #বেঞ্চে ধুলাবালি থাকলে পরিষ্কার করার জন্য কয়েকটি হ্যান্ড-টাওয়েল টিস্যু প্লাস্টিকের একটি স্বচ্ছ ফাইলে রেডি রাখুন। হাফ লিটারের এক বোতল পানিও সাথে রাখুন। (আপনার আসন কোথায় পড়েছে সে ব্যাপারে এখনই শতভাগ নিশ্চিত হয়ে নিন।)
❖ একটি পর্যবেক্ষণ:
>> ২০০ নম্বরের প্রিলি পরীক্ষা চালু হওয়ার পর থেকে একটি রেওয়াজ কাকতালীয়ভাবে চালু হয়েছে।
৩৫ তম: প্রশ্নপত্র কঠিন
৩৬ তম: অপেক্ষাকৃত সহজ
৩৭ তম: প্রশ্নপত্র কঠিন
৩৮ তম: অপেক্ষাকৃত সহজ
৩৯ তম: (স্পেশাল)
৪০ তম: একটু কঠিন
৪২ তম: (স্পেশাল)
৪১ তম: একটু কঠিন
৪২ তম: (স্পেশাল)
৪৩ তম: অপেক্ষাকৃত সহজ
৪৪ তম: প্রশ্নপত্র একটু সহজ হতে পারে — এমন অনুমান কতটুকু ঠিক হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়!!!
সকলের জন্য শুভ কামনা রইলো।
মহান আল্লাহ তায়ালা সবার সহায় হোন।
......................................................
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্ক-এর থাবা
বিসিএস-এ নেগেটিভ মার্ক একটা গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। আপনি যত কম নেগেটিভ মার্ক পাবেন তত বেশি প্রিলিতে টিকার সম্ভাবনা থাকবে। আপনি যত কম দাগাবেন তত বেশি নম্বর পাওয়ার চান্স থাকবে। এখন প্রশ্ন হলো আপনি বুঝবেন কীভাবে কম দাগাতে হবে? এটা আপনি তখনই বুঝতে পারবেন যখন ঘরে বসে বা অন্য কোনভাবে মডেল টেস্ট দেবেন এবং আপনার প্রস্তুতি যদি ব্যাপক ও গভীর হয়।
আমি ৩৩তম বিসিএস-এ ৯৬ টা দাগিয়েছিলাম তাতে ভুল হয়েছে ২৬টা। ফলে মেরে-কেটে স্কোর হয় ৫৮। তখন যারা ৬৫ (১০০ নম্বরের মধ্যে) পেয়েছিল তারা রিটেন দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। ৩৪তম বিসিএস-এ দাগিয়েছিলাম ৮৫টা। মেরে-কেটে ৬২। সেই বার খুব সম্ভবত ৬৪ বা ৬৫ ডেকেছিল। ৩৫ তম বিসিএস ছিল সবার জন্য একটা গুগলি। পিএসসি তার চিরাচরিত রূপ ভেঙ্গে নতুন রূপে আবির্ভূত হয়। বিসিএস ইতিহাসে অন্যতম কঠিন প্রশ্ন। প্রশ্ন পাওয়ার পর মাথায় চক্কর দেওয়া শুরু করল। হৃদয়ে আবার ব্যর্থ মনোরোথের মৃদঙ্গ ধ্বনি অনুরণিত হতে লাগল। একটা পারিতো পাঁচটা পারি না। দুইটা পারিতো দশটা পারি না। মনে হচ্ছিল গত ১ বছর ধরে যা পড়েছি সব বৃথা গেল। মচকাব কিন্তু ভাঙ্গবো না এই পণ ছিল। কোন অবস্থাতেই ভুল দাগানো যাবে না। কারণ আমার অভিজ্ঞতা আমাকে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে ৩৩ ও ৩৪ এর কথা। আমি একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। পরীক্ষা যতই এগুচ্ছিল আমার একটা কথা মনে হচ্ছিল প্রশ্ন কঠিন হয়েছে। ডাইজেস্ট থেকে, জব সলিউশন থেকে, বিগত বছরের প্রশ্ন একেবারে নাই। আমার মনে হয় রিপিট হয় নাই। আর প্রশ্ন কঠিন হয়েছে সেটা আমি বুঝতে পেরেছি আমার প্রস্তুতি কঠিন ছিল বলে। পরীক্ষা দেওয়ার পর আশেপাশে যারা আছে তারা একেক জন কেউ ১৮০, কেউ ১৯০ কেউ ১৭০ দাগিয়েছে এই রকম বলাবলি করছিল। এইগুলো শুনেতো আমি হতাশ। কারণ আমি দাগিয়েছি ১২৪ টা। এক ধরনের ভগ্নহৃদয় নিয়ে নিঃস্ব রিক্ত হয়ে বাড়ি চলে আসলাম। বাসায় এসে প্রশ্ন মিলেয়ে দেখলাম মেরে কেটে ১০৯। এই নম্বরেতো আমি প্রিলিতে আসবো না এইরকম মনে হচ্ছিল। কিন্তু পরক্ষণে খোঁজ- খবর নিয়ে জানতে পারলাম যারা ১০০ এর উপর নিচে থাকবে তারা প্রিলি নিশ্চিত। শুনে মনে আনন্দের সুবাতাশ বয়তে লাগল। যাইহোক প্রথম বিসিএস প্রিলিতে উর্ত্তীণ হলাম। ৩৬ তম বিসিএস আবার গতানুগতিক হয়েছিল সেই বার ১৪৩টা দাগিয়েছিলাম মেরে-কেটে ১২২ টা হয়েছিল। ৩৭ তম বিসিএস অনেকটা ৩৫তম বিসিএসের মত হয়েছিল। তখন ১৩১টা দাগিয়েছিলাম ১০৬ এর মত হয়েছিল। ৩৮ তম বিসিএসে ১৪৯ টা দাগিয়েছিলাম মেরে-কেটে ১২৮ হয়েছিল। সবগুলোতেই প্রিলি উর্ত্তীণ হয়েছিলাম। আমি শতভাগ নিশ্চিত না হলে দাগাতাম না। ৫০-৫০ চান্স একেবারেই নিতাম না। নিলেও কদাচিৎ। তারপরও ভুল হয়ে যেত। কারণ দাগানোর লোভ সামলানো বড়ই কঠিন। আমি ৫০-৫০ চান্স নিতাম যখন দেখতাম আমার ১০০+ হয়ে গেছে এবং যেগুলো স্কিপ করেছিলাম সেগুলো পরে চেষ্টা করলে পারব তখন। এইজন্য পরীক্ষা চলাকালে আমি একটা গুণা দিতাম কয়টা শুদ্ধ হলো দেখার জন্য। অনেকের কাছে বিষয়টা অতিরঞ্জন মনে হতে পারে। বেশি বেশি মডেল টেস্ট দেওয়ার কারণে আমি খুব দ্রুত দাগাতে পারতাম। যার কারণে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট বা ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে প্রথম রাউন্ড দাগানো হয়ে যেত। যেগুলো পারতাম না সেগুলো প্রথম রাউন্ডে ছোট দাগ দিয়ে রাখতাম দ্বিতীয় রাউন্ড যতটুকু পারতাম দাগাতাম। আমি কারেকশন করার সময় যেই গুলোর কনফিউস উত্তর থাকতো সেগুলো যদি দাগাতাম তাহলে ভুল ধরে হিসাব করতাম। আমার এই লেখার মূল কথা হচ্ছে ভুল দাগানো যাবে না। আর দাগালেও সেটা যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়।
বি. দ্র. - আমার এই লেখা যারা পরীক্ষার হলে হাওয়া খেতে যাবেন, খেলায় জেতা বড় না, অংশগ্রহণ করা বড় এই ধরনের মনোভাব যারা পোষণ করেন তাদের জন্য নয়।
.................................................
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার দিন এবং আগের রাতে করণীয়
★পরীক্ষার আগের রাতে করণীয়ঃ
১) এডমিড কার্ড, কলম ২/৩ টি,পেন্সিল ১টি,রাবার ১টি, কাটার ১টি, পানির বোতল,টাকা,বাসার মোবাইল নম্বর এবং মাস্ক গুছিয়ে রাখুন।(সম্ভব হলে জাতীয় পরিচয়পত্র, টিকা কার্ড ও হ্যান্ডওয়াশ গুছিয়ে রাখুন )
২) কোন পেশাক পরিধান করে হলে যাবেন তা রাতেই গুছিয়ে রাখুন।
৩) নিজেকে চাপমুক্ত রাখতে রাত ১০ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ুন।
★পরীক্ষার দিন করণীয়ঃ
১) যানজটের ঝামেলা এড়াতে কমপক্ষে ২ ঘন্টা আগে হলের কাছাকাছি অবস্থান করা।
২) হালকা নাস্তা করে হলে প্রবেশ করা
৩) পরীক্ষার সিটে বসার আগে ওয়াশরুমে গিয়ে নিজেকে রিফ্রেশ করা।
৪) রোল নম্বর এবং অন্যান্য বৃত্তগুলো সতর্কতার সহিত পূরণ করা ও চেক করা।(প্রশ্ন পাওয়ার পর প্রশ্নের সেট কোড দেখে উওরপত্রের সেটকোডের বৃত্ত ভরাট করুন। আর উওরপত্রে সেটকোড পূরণ করা থাকলে ঐ সেটের প্রশ্নপত্রের সাথে সেটকোড সঠিকভাবে মিলিয়ে নিন।)
৫) প্রশ্ন পাওয়ার পর যেগুলো সরাসরি কমন পড়েছে সেগুলোর উওর প্রথমে দেওয়া।অতঃপর নিজে যে বিষয়ে ভালো সে বিষয়টির উওর করা। এরপর ১ মিনিটের মধ্যে কতগুলো হয়েছে তা গণনা করা।সবশেষে আর কতগুলো উওর করতে চান তা নির্ধারণ করা।
৬) অতি আবেগী হয়ে বেশি বৃত্ত ভরাট না করা(নিজেকে সংযত রাখা)
৭) নেগেটিভ মার্ক এর কথা মাথায় রাখা
৮) সময়ের দিকে খেয়াল করা
৯) গণিত কষতে গিয়ে অতিরিক্ত সময় নষ্ট না করা
১০) পরীক্ষার সময় অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে বিপদ ডেকে না আনা।
১১) কক্ষ পরিদর্শকদের সাথে ভালো আচরণ করা।
সবার জন্য শুভকামনা থাকলো।
..........................................
এই পোস্টের বিষয়বস্তুর জন্য
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি এসব ব্যক্তিবর্গের প্রতি 👇
Sharif Hossain Ahmed Chowdhury, Author
আবদুল-আল-মামুন, ৩৬তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)
মুন্না স্যার, ৩৫তম বিসিএস (গণিতে ১ম স্থান)