বিসিএস ক্যাডার হওয়া অনেক মানুষেরই স্বপ্ন। আর এ স্বপ্নচারী মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভার মধ্যে আমার কাছে প্রিলিমিনারিকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণও বটে। এর কারণ দুটো। এক. এতে সর্বাধিক সংখ্যক প্রতিযোগী অংশ নেন (দুই লাখের অধিক)। দুই. এর নির্দিষ্ট কোনো পাস নম্বর নেই। অর্থাৎ কত পেলে যে প্রিলিতে উত্তীর্ণ হবেন, তা বলা যায় না। তাই পরীক্ষা হয়ে গেলেও সবাই একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকেন টিকবেন কি না। তা ছাড়া প্রিলির নম্বর ২০০ হওয়ায় দুই ঘণ্টায় উত্তর করাটাও কঠিন হয়ে পড়ে। তাহলে উপায় কী? অবশ্যই আছে।
৩৭তম বিসিএসের প্রাথমিক বাছাই (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। ওই দিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও রংপুর কেন্দ্রে একযোগে এই পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার আগের এই সময়কে এখন থেকেই কাজে লাগাতে হবে।
আমি ধরে নিলাম আপনি খুব বেশি পড়েননি বা মাঝামাঝি অবস্থায় আছেন। শুরুটা কীভাবে হওয়া উচিত? প্রথমে যে কাজটি করা উচিত তা হলো বিগত বছরের প্রশ্নগুলো পড়া। অর্থাৎ দশম বিসিএস থেকে ৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রশ্নগুলো ব্যাখ্যাসহ পড়তে হবে। এর কারণ দুটো। এক. প্রশ্নগুলোর কিছু অংশ সব প্রিলিমিনারি পরীক্ষায়ই রিপিট হয়ে থাকে। যা আপনাকে সঠিকভাবে উত্তর করতে হবে। কারণ এই প্রশ্নগুলো সাধারণত অন্য প্রতিযোগীরা ভুল করবেন না। আপনি করলে নম্বর নিচে নেমে যাবে। দুই. প্রশ্নের ধরন বোঝার জন্য পড়তে হবে। যেকোনো একটা গাইড থেকে পড়লেই হবে। তবে পড়ার সময় বিগত যে প্রশ্নগুলো প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে তা বাদ দিয়ে দিতে হবে। যেমন যদি প্রশ্ন থাকে ২০০১-২০০২ অর্থবছরে কৃষি খাতে বরাদ্দ কত? এটি এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। তবে আপনি চাইলে আপডেট করে পড়বেন।
বিসিএসের বাইরেও অনেক পরীক্ষা হচ্ছে। যেমন ব্যাংক জব, সরকারি বিভিন্ন পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ইত্যাদি। এতেও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করা হয়। একটা কথা মনে রাখবেন, যেকোনো পরীক্ষায় যদি কোনো বিষয়ে প্রশ্ন হয়, বুঝতে হবে তা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রশ্নকর্তা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নই আনার চেষ্টা করেন। এই প্রশ্নগুলো পাওয়ার জন্য আপনি একটা জব সলিউশন গাইড সংগ্রহ করবেন। গাইডটি বেশ উঁচু। দেখে ভয় পাওয়া যাবে না। ভয় পেলে প্রথমবার ক্যাডার বা কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পাওয়া যাবে না। যাহোক বইটি পড়বেন কীভাবে? প্রতিদিন তিনটি প্রশ্ন সমাধান করবেন। এতে পরীক্ষা আসতে আসতে পুরো বইটি শেষ না হলেও অনেকখানি শেষ হয়ে যাবে। মনে রাখবেন এই গাইডটি পড়তে ‘ধীর নীতি’ অবলম্বন করবেন। পাঁচ দিনে সব শেষ করতে যাবেন না। এটি আপনার ব্যাকআপ প্রস্তুতি।
বিসিএসের প্রশ্নগুলো পড়া হয়ে গেলে বিষয়ভিত্তিক পড়া শুরু করতে হবে। আজকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ওপর আলোচনা করছি। অনেকেরই জানা আছে, ব্যাকরণ অংশে ১৫টি প্রশ্ন ও সাহিত্য অংশে ২০টি প্রশ্নসহ মোট ৩৫ নম্বর বাংলার জন্য বরাদ্দ। এখানে একটা কথা বলা জরুরি, ১৫-এর জায়গায় ১৬ ও ২০-এর জায়গায় ১৯-ও হতে পারে। তবে ৩৫ ঠিকই থাকবে। আর একটা কথা মনে রাখবেন, পিএসসি প্রদত্ত সিলেবাস অনুযায়ী অনেক সময় সব প্রশ্ন না-ও হতে পারে। যেমন কারক সিলেবাসে নেই। কিন্তু প্রশ্ন আসতে পারে। আসলে তো আর বলতে পারবেন না, এর উত্তর দেব কেন? পারব না। সুতরাং প্রস্তুতি যেহেতু নেবেন ভালো করেই নেবেন।
ব্যাকরণ অংশ নিয়ে বলছি
ক) বাংলা ব্যাকরণ কিছুটা কঠিন ধাপের। সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসরণে রচিত।
খ) এর মধ্যে আপনি কিছু নিয়ম বুঝবেন, সহজে মনেও রাখতে পারবেন। আবার কিছু নিয়ম আপনি বুঝবেন না, যা বুঝবেন না, যে পর্যন্ত পারেন মুখস্থ করে ফেলবেন।
গ) সব সময় বোঝা যাবে না এটাই স্বাভাবিক। মুখস্থ বিদ্যাও একটা বিরাট সম্পদ।
ঘ) ব্যাকরণের জন্য আপনি যে বইটা খুব ভালো করে পড়বেন, তা হলো নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বইটা। সঙ্গে একটা এমসিকিউ বাংলা গাইডও রাখতে পারেন।
ঙ) কয়েকটা বিষয় খুব ভালো করে পড়বেন: সন্ধি, উপসর্গ, সমাস, নত্ব-বিধান ও ষত্ব-বিধান, বর্ণ, শব্দ, প্রত্যয়, ধ্বনি পরিবর্তন ইত্যাদি।
চ) কিছু অধ্যায় ব্যক্তি বিশেষে কিছু প্রতিযোগী আয়ত্ত না-ও করতে পারেন। চেষ্টার পরও যদি না পারেন তা ছেড়ে দিন। ঝুঁকি নিন। না পড়ে শূন্য পাওয়া আর পড়ে শূন্য পাওয়া একই কথা।
ছ) নিপাতনে সিদ্ধ নিয়মগুলো ছন্দ ব্যবহার করে মনে রাখতে পারেন। এখান থেকে প্রায়ই প্রশ্ন হয়ে থাকে।
জ) পড়ার সময় কঠিন বানানগুলো লেখার অভ্যাস করুন। যা শুদ্ধিকরণে কাজে লাগবে।
সাহিত্য অংশ সম্পর্কে বলছি। এর প্রধান তিনটা যুগ। প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগ। প্রথম দুটো যুগে খুব বেশি সাহিত্যকর্ম নেই। যা আছে তা সহজেই আয়ত্ত করা যায়। এখানে খুব বেশি জিনিস বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। পড়ে নেবেন। যে বিষয়টা বিশাল তা হলো আধুনিক যুগ। এর মধ্যে আবার দুটি ভাগ। উন্মেষ পর্ব ও বিকাশ পর্ব। অসংখ্য সাহিত্যিক এই অংশে আছে। যা করতে হবে…
ক) সাহিত্যিকদের পর্যায় বা ক্রম অনুযায়ী পড়ার দরকার নেই। গুরুত্ব অনুযায়ী পড়বেন।
খ) প্রথমে আধুনিক যুগের সেরা সাহিত্যিকদের চিহ্নিত করে নেবেন।
গ) গুরুত্ব বাছাই করার একটা কৌশল হলো যাদের আপনি চেনেন বা অনেক বেশি নাম শুনেছেন, তাঁরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অজিত দত্ত, আবুল হাসান। এই তিনজনের মধ্যে কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? উত্তর হবে নিশ্চয়ই রবীন্দ্রনাথ। এভাবে চলবে।
ঘ) ড. সৌমিত্র শেখরের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা বইটি পড়তে পারেন।
ঙ) বিগত প্রশ্নের আলোকে কিছু সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ প্রশ্ন পড়বেন। যেমন কোথাও হরিশংকর জলদাসের একটা গ্রন্থের নাম আসল। তাহলে আপনি ওই লেখকের অন্য লেখাগুলোও একটু দেখে নেবেন।
চ) প্রগতিশীল লেখকেরা একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন আহমদ ছফা, হুতমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ ইত্যাদি।
ছ) সাম্প্রতিককালে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ লেখকের লেখা প্রকাশিত হয় তাঁর নাম জানার চেষ্টা করবেন।
জ) আধুনিক যুগ বলতে আজকের দিন পর্যন্ত সময়কে বোঝায়। তাই চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।
ঝ) সাহিত্য বলতে যেকোনো ধরনের লেখা বা আলোচনাকে বোঝায়। তাই প্রবন্ধ প্রকাশিত হলেও খেয়াল রাখবেন।
ঞ) খ্যাতিমান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের লেখাও জেনে যাবেন।
ট) যে গ্রন্থগুলো সম্প্রতি কোনো পুরস্কার পেল বা পাবে তা গুরুত্বপূর্ণ। পারলে ওই লেখক সম্পর্কেও জানবেন।
বাংলায় ভালো করতে হলে আপনাকে অবশ্যই বাছাই করে পড়তে হবে। যে যত ভালো বাছাই করতে পারবেন, তিনি তত ভালো করবেন। কারণ এর পরিধি অনেক বড়। আর যা পড়বেন তা যেন মনে থাকে এমনভাবে পড়বেন। পড়া জিনিস ভুল করার চেয়ে কষ্ট আর নেই। তাহলে হোক যাত্রা শুরু। দেখা হবে বিজয়ে।
সংগৃহীত