আলোচনার ধারাবাহিকতার জন্য আসুন প্রথমে উনবিংশ শতাব্দির একটি চিত্র দেখে নেই--
উনবিংশ শতাব্দিতে ব্রিটেন, ফ্রান্স, হল্যান্ড, স্পেন ও পর্তুগাল তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি ও শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহ করার জন্য দক্ষিণ এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকাতে তাদের সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটায়। যে কারণে ১৮৭০ সাল থেকে ১৯১৪ সালের সময়সীমাকে ‘Age of Imperialism’ বলা হয়। এছাড়া এ সময় ইউরোপে ব্যাপক শিল্পায়ন হয়, শিল্পায়নের ফলে শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলন এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের বিস্তার ঘটে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন দেশ কর্তৃক কট্টর জাতীয়তাবাদী নীতি গ্রহণ বিংশ শতাব্দির রাজনীতিকে পুরোপুরি পাল্টে দেয়। এসময় উগ্র জাতীয়তাবাদের বিস্তার দেখা যায় জার্মানিতে। ১৮৯৭ সাল থেকে দেশটি যে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে তার উদ্দেশ্য ছিল জবরদস্তি করে নিজেকে বিশ্ব রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করা। এর অংশ হিসেবে জার্মানি নৌ-শক্তি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিলে ব্রিটেন শঙ্কিত হয়ে পড়ে। এর ফলে ব্রিটেন জার্মানির সাথে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং নিঃসঙ্গতা পরিহার করে ফ্রান্সের সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। পরবর্তীতে ১৯০৭ সালে রাশিয়া-ফ্রান্স-ব্রিটেন মিলে ‘ ট্রিপল আঁতাত ’ গড়ে উঠে।
********************************************
যুদ্ধের সূত্রপাতঃ
---------------------
পূর্ব এশিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে জাপান ইতোমধ্যেই ১৯৩৭ সালে প্রজাতন্ত্রী চীনে আক্রমণ করে।পরবর্তীতে ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। দ্বিতীয় ঘটনাটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা বলে গণ্য করা হয়। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪১ পর্যন্ত একনাগাড়ে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ অভিযান পরিচালনা আর চুক্তি সম্পাদনার মাধ্যমে জার্মানি ইতালির সাথে একটি মিত্রজোট গঠন করে এবং ইউরোপ মহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল নিজের দখলে বা নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হয়। মলোটভ- রিবেনট্রপ চুক্তি অনুসারে জার্মানি আর সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের দখলিকৃত পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রসমূহ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। এই সময় শুধু যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য ব্রিটিশ কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহ অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছিল (যেমন 'উত্তর আফ্ৰিকার যুদ্ধসমূহ’ আর বহুদিন ধরে চলা ‘আটলান্টিকের যুদ্ধ’)। ১৯৪১ সালের জুন মাসে ইউরোপীয় অক্ষশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে যার ফলশ্রুতিতে সমর ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ রণাঙ্গনের অবতারণা ঘটে। এই আক্রমণ অক্ষশক্তির সামরিক বাহিনীর একটা বড় অংশকে মূল যুদ্ধ থেকে আলাদা করে রাখে। ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে জাপান অক্ষশক্তিতে যোগদান করে এবং প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় উপনিবেশগুলো আক্রমণ করে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে পশ্চিম প্ৰশান্ত মহাসাগরের অধিকাংশ অঞ্চল জয় করতে সক্ষম হয়।
১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র মিত্রশক্তির সাথে যোগ দেয়। মূলত জার্মানি এবং জাপান দুই অক্ষশক্তিই যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণ করার মাধ্যমে একে যুদ্ধে ডেকে আনে। অপরদিকে চীনের সাথে জাপানের ছিল পুরাতন শত্রুতা; ১৯৩০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ চলছিল। এর ফলে চীনও মিত্রপক্ষে যোগদান করে। ১৯৪৫ সালে জার্মানি এবং জাপান উভয় দেশের নিঃশর্ত আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
এই যুদ্ধে নব্য আবিষ্কৃত অনেক প্রযুক্তির ধ্বংসাত্মক প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রয়োগ ছিল পারমাণবিক অস্ত্রের। মহাযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই এই মারণাস্ত্র উদ্ভাবিত হয় এবং এর ধ্বংসলীলার মধ্য দিয়েই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। সকল পুণর্গঠন কাজ বাদ দিলে কেবল ১৯৪৫ সালেই মোট ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই যুদ্ধের পরপরই সমগ্র ইউরোপ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়; এক অংশ হয় পশ্চিম ইউরোপ আর অন্য অংশে অন্তর্ভুক্ত হয় সোভিয়েত রাশিয়া। পরবর্তীতে এই রুশ ইউনিয়নই ভেঙে অনেকগুলো ছোট ছোট রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহের সমন্বয়ে গঠিত হয় ন্যাটো আর সমগ্র ইউরোপের দেশসমূহের সীমান্তরেখা নির্ধারিত হতে শুরু করে। ওয়ারস প্যাক্টের মাঝে অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহ নিয়ে দানা বেঁধে উঠে স্নায়ুযুদ্ধ। এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিশ্বমঞ্চে অভিনব এক নাটকের অবতারণা করে।
********************************************
কারণসমূহঃ
--------------
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিরাট ধ্বংসকার্য শেষ হওয়ার মাত্র একুশ বছরের মধ্যেই বিশ্ববাসী আর একটি বিধ্বংসী যুদ্ধের মুখোমুখি হয় । বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এই বিশ্বযুদ্ধের দ্বারা ক্ষতি গ্রস্থ হয় । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ ব্যাখ্যাকালে ঐতিহাসিকরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলি তুলে ধরেছেন, যেমন—
★ভার্সাই সন্ধির কঠোরতা ও জার্মানির প্রতিশোধ স্পৃহাঃ
--------------------------------------------------------------
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী মিত্রপক্ষ পরাজিত জার্মানির ওপর বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপিয়ে দেয় । সন্ধির শর্ত সম্পর্কে জার্মান প্রতিনিধিদের মতামত উপেক্ষা করে তাঁদের সন্ধিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল । সেই একতরফা চুক্তিকে জার্মানির জনগণ কোনো দিনই মেনে নেননি । ইতিমধ্যে জার্মানি ভিতরে ভিতরে সামরিক শক্তিকে সুসজ্জিত করে তোলে । জার্মানির জনগণের সেই জনরোষকে কাজে লাগিয়ে তাই মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যেই অ্যাডলফ হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি জার্মানি ভার্সাই সন্ধির সমস্ত অপমানজনক চুক্তি ভেঙে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় । বলা যেতে পারে ভার্সাই সন্ধির কঠোরতার মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল ।
★ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণ নীতিঃ
----------------------------------------------
হিটলারের প্রতি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের আপসমূলক তোষণ নীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল । জার্মানির বেপরোয়া অস্ত্রসজ্জা, রাইনল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও চেকোস্লোভাকিয়া দখল প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স কোনো রকম বাধা না দেওয়ায় জার্মানি আরও বেপরোয়া ও আগ্রাসী হয়ে ওঠে । এই কারণেই ঐতিহাসিক এ. জে. পি. টেলর হিটলারের প্রতি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের আপসমূলক তোষণ নীতিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ বলে অভিহিত করেছেন ।
★বৃহৎ শক্তিবর্গের অনুপস্থিতিঃ
---------------------------------------
মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের চেষ্টাতে জাতিসংঘ স্থাপিত হলেও মার্কিন সিনেট তা অনুমোদন করে নি । ফলে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশাল দেশ জাতিসংঘের বাইরে ছিল । ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের হাতে জাতিসংঘের দায়িত্ব থাকলেও আমেরিকার অনুপস্থিতিতে তারা বিশ্ব উত্তেজনা প্রশমনে ব্যর্থ হয় ।
★ জার্মানি, ইতালি ও জাপানের উপনিবেশ বিস্তারের আকাঙ্খাঃ
----------------------------------------------------------
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও আমেরিকা বিশ্বের অধিকাংশ উপনিবেশ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় । জার্মানি, ইতালি ও জাপানের ভাগ্যে কোনো উপনিবেশই জোটেনি । জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও কাঁচামাল সংগ্রহের জন্যে এই দেশগুলি উপনিবেশ দখলের কর্মসূচি গ্রহণ করে । এই ভাবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, যার ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনে ।
★গণতন্ত্রী রাষ্ট্রগুলির মতবিরোধের সুযোগে ফ্যাসিবাদী শক্তির বিস্তারঃ
----------------------------------------------------------
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে মত বিরোধ দেখা দেয় । দুই বৃহৎ গণতন্ত্রী রাষ্ট্রের এই মতবিরোধ ফ্যাসিবাদী শক্তির বিস্তারকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছিল ।
★জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতাঃ
-----------------------------
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান এবং সেই সঙ্গে বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য লিগ অফ নেশনস বা জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠা হয় । কিন্তু জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতার জন্যই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের বিপর্যয় ঘটে এবং ফ্যাসিবাদী ও নাৎসিবাদী একনায়কতন্ত্রের উত্থান হয়, যার ফলশ্রুতিতে বিশ্ববাসী আরও একটি ভয়াবহ ও নৃশংস বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখীন হয় ।
********************************************
ফলাফলঃ
------------
★এই যুদ্ধের ফলে বৃহৎ শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের আত্মপ্রকাশ করে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি প্রভৃতি ইউরোপীয় দেশের স্থান হয় দ্বিতীয় সারিতে।
★দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট দল আত্মপ্রকাশ করে। একে কেন্দ্র করে আবার পৃথিবীর রাষ্ট্রসমূহ বিশেষ করে ইউরোপ দুটি শিবিরে ভাগ হয়ে যায়। একদিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি এবং তাঁদের মিত্র দেশগুলোতে, আর অন্যদিকে রাশিয়া, পোল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া, পূর্ব জার্মানি ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশ। তবে কয়েকটি দেশ নিরপেক্ষ থেকে যায়, ভারত ও যুগোশ্লাভিয়া যার অন্যতম। এভাবে দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েতের মধ্যে শুরু হয় স্নায়ুযুদ্ধ।
★ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্যবাদী আদর্শ দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। চীন (১৯৪৯), পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া ও পূর্ব জার্মানি ইত্যাদি দেশ সাম্যবাদী আদর্শ গ্রহণ করে প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
★ইতালিতে ফ্যাসিবাদী সরকারের জায়গায় প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। জার্মানি দ্বিখন্ডিত হয়ে ১৯৪৯ সালে পূর্ব জার্মানি এবং পশ্চিম জার্মানি দুটি দেশে বিভক্ত হয়।
★দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে পরাধীন দেশগুলোতে শুরু হয়ে যায় স্বাধীনতার লড়াই। বিশেষ করে ব্রিটিশ শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ায় ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জন করে, যদিও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল এই স্বাধীনতা মেনে নিতে পারছিলেন না।
★ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর ১৯৪৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হয়।
★ যুদ্ধ এড়িয়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘ সৃষ্টি হয়।
কিছু অজানা ইতিহাস এবং আমেরিকার উত্থান
------------------------------------------------------------
প্রথম মহাযুদ্ধে আগ পর্যন্ত বিশ্বের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি । প্রথম মহাযুদ্ধের পর ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি তার পূর্বেকার অবস্থান হারায় এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক কেন্দ্রটি স্থানান্তরিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন ও ফ্রান্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঋন নেওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাভবান হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপীয় দেশগুলির কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঋনের পরিমান ছিল ৪ বিলিয়ন ডলার; প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইউরোপীয় দেশগুলির ঋনের পরিমান দাঁড়ায় প্রায় প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি পরাজিত হয়েছিল। পরাজিত জার্মানিকে বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ গুনতে হয়েছিল।
কিন্তু প্রথম মহাযুদ্ধের পর মার্কিনীরা হয়ে উঠেছিল বিশ্বের প্রধান অর্থ ও শিল্পপন্যের রপ্তানিকারক। যার ফলে বিনিময়ের মাধ্যমও বদলে গিয়েছিল নাটকীয় ভাবে। ব্রিটেন আগে পণ্য লেনদেন করত পণ্যের বিনিময়ে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য, খনিজ পদার্থ ও শিল্পে স্বয়ং সম্পূর্ন হওয়ায় মার্কিন পণ্যের বিনিময়ে নগদ অর্থ দাবী করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । ইউরোপ এই অর্থ পরিশোধ করল জার্মানির কাছ থেকে পাওয়া ক্ষতিপূরণের অর্থে। জার্মানি আবার এই বিপুল অর্থ ঋণ নিয়েছিল খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই। গত শতাব্দীর বিশের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের ওপর জার্মানিকে দিয়েছিল। (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমন করেছিল অর্থনৈতিক স্বার্থে ...প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পিছনে মার্কিন ষড়যন্ত্র ছিল কিনা সেটি মোহশূন্য ইউরোপীয় ইতিহাসবিদদেরই খুঁজে বার করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপরাধী রাষ্ট্র; রাষ্ট্রটি ভোগবাদ প্রচার করে বিশ্বময় দারিদ্রের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলেছে।
********************************************
উপসংহার:
--------------
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানবসভ্যতার ইতিহাসে এযাবৎকাল পর্যন্ত সংঘটিত সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল, এই ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়সীমা ধরা হলেও ১৯৩৯ সালের আগে এশিয়ায় সংগঠিত কয়েকটি সংঘর্ষকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। তৎকালীন বিশ্বে সকল পরাশক্তি এবং বেশিরভাগ রাষ্ট্রই এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং দুইটি বিপরীত সামরিক জোটের সৃষ্টি হয়; মিত্রশক্তি আর অক্ষশক্তি। এই মহাসমরকে ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্তৃত যুদ্ধ বলে ধরা হয়, যাতে ৩০টি দেশের সব মিলিয়ে ১০ কোটিরও বেশি সামরিক সদস্য অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ খুব দ্রুত একটি সামগ্রিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং সামরিক ও বেসামরিক সম্পদের মধ্যে কোনরকম পার্থক্য না করে তাদের পূর্ণ অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রয়োগ করা শুরু করে। এছাড়া বেসামরিক জনগণের উপর চালানো নির্বিচার গণহত্যা, হলোকাস্ট (হিটলার কর্তৃক ইহুদীদের উপর চালানো গণহত্যা), পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগ প্রভৃতি ঘটনায় কুখ্যাত এই যুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি থেকে সাড়ে ৮ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এসব পরিসংখ্যান এটাই প্রমাণ করে যে এটাই পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংসতম যুদ্ধ।
source: wikipedia,newspaper & blog