1750 সালে ব্রিটেনে 1st Industrial Revolution হয়; যখন মানুষ হস্তচালিত উৎপাদন থেকে যন্ত্র চালিত উৎপাদনের যুগে প্রবেশ করেন। জেমস ওয়াটের বাষ্পিয় ইঞ্জিন ছিল এর সবচেয়ে বড় প্রতীক।
1870 সালে মানুষ ইলেক্ট্রিসিটিকে গৃহস্থালির কাজে লাগানো মাধ্যমে 2nd Industrial Revolution এর যুগে প্রবেশ করেন। পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেল ভিত্তিক উৎপাদন ছিল এর চালিকা শক্তি। কিন্তু কমপিউটার আবিষ্কার এবং একে উৎপদন কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে 1969 সালে শুরু হয় 3rd Industrial Revolution । আর অটোমেটেড সফট ওয়ার ও Artificial Intelligence বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে একবিংশ শতাব্দীতে শুরু হয় 4th Industrial Revolution বা চর্তুথ শিল্প বিপ্লব।
কিন্তু ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে এসেও কি আমরা সন্তুষ্ট? শিল্প বিপ্লবের ইফেক্ট বেশি না সাইড ইফেক্ট বেশি? শিল্প বিপ্লবের ক্রিয়েশন বেশি না পলিউসন বেশি? এই শিল্প বিপ্লবগুলো জীবনে দিয়েছে বেগ কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ। দিয়েছে দূর্নীতি কেড়েছে নীতি। দিয়েছে যন্ত্র কিন্তু কেড়ে নিয়েছে মস্তিস্ক। দিয়েছে গতি কিন্তু কেড়ে নিয়েছে চিন্তাশক্তি।
1776 সালে অর্থনীতির জনক অ্যাডাম স্মিথ তাঁর বিখ্যাত An Inquiry into the Nature and Cause of the Wealth of Nations গ্রন্থে Theory of Comparative Advantage এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলেন। এর মূল বক্তব্য ছিল বিশ্বের যে অঞ্চলে যে পণ্য সবচেয়ে কম খরচে, সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কোয়ালিটির উৎপাদন সম্ভব; সেই অঞ্চলে শুধু সেই পণ্যই উৎপাদন করা উচিৎ। যাতে সমগ্র বিশ্ব সবচেয়ে কমমূল্যে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পণ্য পেতে পারে। সাথে সাথে স্মিথ “Laissez-faire” ব্যবস্থার মাধ্যমে মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রচারণা শুরু করেন। এম মূল্য কথা হচ্ছে সরকারের Revenue বা কর দরকার; সরকার কর নিবে। কিন্তু বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করবে মার্চেন্টরা; সরকার এখানে কোন হস্তক্ষেপ করবেনা।
ব্যস ! বিশ্ব অর্থনীতি ও সরকার ব্যবস্থা যেহেতু মার্চেন্টদের হাতে ছিল; সেহেতু তারা শুরু করে মার্কেন্টাইলিজম অর্থনীতির। রির্কাডো Free Market কে Free Trade বা International Trade-এ রুপান্তরিত করার Advocacy শুরু করে। আর কলোনিস্টরা এই ২ রথে চড়ে অবৈধ উপনিবেশিক ব্যবস্থাকে বৈধ করে নেন। আর এই ব্যবস্থার নাম দেন Classical Economy.
মুনাফা লুটের এই ক্ল্যাসিক্ল্যাল ইকেনমিই তাদের উঠতি প্রতদ্বন্দ্বী জার্মানিকে অন্যায় ভাবে ধ্বংস করতে ১৯১৪-১৮ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সৃষ্টি করে এবং ধ্বংস করে জার্মান ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে। 1929 সালে এই নিয়ন্ত্রণহীন মুনাফা প্রতিযোগিতা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার ধ্বসের কেলেংকারি Wall Street Crash এর মাধ্যমে, Great Depression বা এ যাবৎ কালের পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা অর্থনৈতিক ধ্বস মহামন্দার শুরু করে।
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে জাপানের উঠতি শিল্প ও প্রযুক্তিকে ধ্বংস করে। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জার্মান কিংবা ইতালি নয়; জাপানি শিল্পকে ধ্বংস করতে বোমা ফেলে হিরোসিমা-নাগাসাকিতে। স্রেফ অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে বিশ্ব যুদ্ধ হয়; বিশ্বযুদ্ধ হয় কে কতটা আন্তর্জাতিক বাজার দখল করতে পারবে সেই প্রতিযোগিতার জন্য। কিন্তু মূলা ঝুলানো হয় জাতীয়তাবাদে,মূলা ঝুলানো হয় চেতনার, মূলা ঝুলানো হয় দেশপ্রেমের।
তাই 1944 সালে অত্যন্ত কিছু সৎ সুশীল বুঝতে পেরেছিল যে, এই মুনাফাখোর শিল্পপ্রতিদের মুক্তবাণিজ্যের নামে ছেড়ে দিলে তারা সরকার গঠন করাবে এবং নিজেদের স্বার্থে লুটপাট ও বারবার বিশ্বযুদ্ধ বাধাবে। তাই 44টি দেশ মিলে ব্রিটেন উডস কনফারেন্স এর মাধ্যমে বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে IMF, বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে World Bank এবং বিশ্ব বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে WTO প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। কিন্তু ১৮৯ সদস্যের IMF , ১৮৯ সদস্যের World Bank প্রতিষ্ঠা হলেও ১৬৪ সদস্যের WTO প্রতিষ্ঠিত হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। প্রতিষ্ঠান ৩টির বিশ্বের জন্য কাজ করার কথা থাকলেও এরা কাজ করত ২টি:
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ জি-৭ কে প্রমোট করা
২.বাকি বিশ্বকে পিছিয়ে রাখতে ব্যবস্থা করা
ওয়ালারস্টোনের বিখ্যাত World System Theoryতে এই প্রতিষ্ঠানগুলো ও জি-৭ কে ধুয়ে দিয়েছেন।
আসলেই তাই। এই মুনাফাখোর বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা, মুনাফা লাভের জন্য মানুষের জীবনকেও বারবার ঝুঁকির সামনে ফেলেছে। কন্সপারেন্সি থিওরি ও ট্রাম্পের প্রতি সদয় মিডিয়াগুলো বারবার বলছে করোনা-১৯ চীন তার উহান ল্যাব থেকে তৈরি সৃষ্ট। চীনের গেমটি এমন ছিল; “চীন আগে উহানে করোনা ছড়াবে এবং সেটি সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। যেহেতু চীনের প্রতিষেধক জানা আছে, তাই চীন করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করে নিবে এবং সমগ্র বিশ্বে করোনার টিকা বিক্রি করে আবার বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির অবস্থানটির দখল নিবে। আর এর মাধ্যমে ২০১৮ সালে ট্রাম্প ঘোষিত Trade War বা বাণিজ্য যুদ্ধের প্রতিশোধ নিবে”।
ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বা চীনের করোনা পলিটিক্সের যাব না। কিন্তু একথা অস্বীকারের উপায় নাই যে, একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় গেমার, সবচেয়ে বড় পলিটিশিয়ান ভলাদিমির পুতিন। এই ব্যক্তিটি শুধু মাত্র রাশিয়াকে আধামরা অবস্থান থেকে শীর্ষস্থানে ফেতরই আনেননি; বরং বিশ্ব নেতৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে এক আধাপাগল ব্যক্তিকে বসিয়ে রেখে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের নিকট হেয় করে দিয়েছেন।
কভিডের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেই তিনি ক্ষ্যান্ত হননি; বরং নিজের মেয়েকে ১ম ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে এর বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহনযোগ্যতাকে অনেক উপরে নিয়ে গেছেন। তাই কন্সপারেন্সি থিওরি যদি সঠিক হয়; তবে পুতিনের রাশিয়া স্পুটনিক-৫ নামক এক লাটি দিয়েই চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুটি সাপকেই পঙ্গু করে দিলেন। যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থব প্রমাণ করলেন আর চীনের বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে দিলেন।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন টেলিভিশনে এই টিকার অনুমোদন নথিভুক্ত করার ঘোষণা দেন; তখন তিনি বলেন: “স্পুটনিক-৫ নামক করোনা ভ্যাকসিন সফলভাবে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী অ্যান্টিবডি তৈরি করতে এবং কোষের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পেরেছে এবং আমি এটা খুব ভাল করে জানি কারণ আমার মেয়েকে এই টিকার ইনজেকশন দেয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন প্রথম ইনজেকশনের পর তার মেয়ে মারিয়া ভোরন্তসোভার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০০ ফারেনহাইট) হয়, কিন্তু তারপরই তা ৩৭ ডিগ্রিতে নেমে আসে। “ব্যস আর কোন উপসর্গ হয়নি। দ্বিতীয়বার ইনজেকশনের পর তার তাপমাত্রা সামান্য বেড়েছিল, কিন্তু তারপর সেটা নেমে যায় এবং সে খুবই সুস্থ বোধ করছে।”
সুতরাং চীন-যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রীক বাই-পোলার বা দ্বিমেরু ভিত্তিক যে বা বিশ্বব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে; তার চেয়ে বড় সত্য হচ্ছে এই পৃথিবীর এখন অন্যতম বড় শক্তি রাশিয়া। কারণ শক্তি ও অর্থে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের মত স্থুলকায় এবং চীনের মত মোটাসোটা না হলেও সে অত্যন্ত পেশিবহুল। আর রাশিয়ার মূলশক্তি তার কূটনৈতি নৈপুন্যে; মূল শক্তি পুতিন নামক এক সাদা নেকড়ের নেতৃত্বে।
