লক্ষণ সেনের সময়ে সেন সাম্রাজ্য ছিল সুবিশাল, পশ্চিমে কলিঙ্গ থেকে পূর্বে কামরূপ অব্দি। বাংলা নামের কোন একক জনপদের সৃষ্টি বা নামকরণ হয় নি তখনও। এই সুবিশাল রাজ্যের তিনটা রাজধানী থেকেই এর বিশালতা প্রমাণ পাওয়া যায়।
1179 সালে লক্ষণ সেন সিংহাসনে বসেন, গৌড় তখন সেন সাম্রাজ্যের বাহিরে। লক্ষণ সেনই প্রথম বিদ্রোহী অঞ্চল গৌড় দখল করেন। ১৩শ শতকের শুরুর দিকে লক্ষণ সেনের শাসনের শেষ দিকে সেন রাজ্যের গৌড় অঞ্চল দখল করেন বখতিয়ার খিলজী। খিলজী এরপর তিব্বতে অভিযান চালান কিন্ত পরাজিত হন।
মুসলিম ঐতিহাসিক মিনহাজ-ই-সিরাজ "তবকাত-ই- নাসিরি" বইয়ে লিখেছেন , তুর্কিদের বিজিত অঞ্চল ছিল খুব সামান্য, গঙ্গার দুই তীরে অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশের রাজধানী অঞ্চলে এবং ভারতের মালদা মুর্শিদাবাদ অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল। অন্যদিকে সেনদের হাতে এই অঞ্চল ছাড়া পুরো দক্ষিণ বঙ্গ , পূর্ব বঙ্গ অর্থাৎ মোটামুটি পুরো বাংলাদেশ এমনকি কামরূপ (আসাম) অবধি ছিল। সেখানে স্বাধীন ভাবে শাসন করতে থাকে সেন বংশ। তিব্বতে খিলজীর পরাজয়ের পরে তুর্কিরা আরো দুর্বল হয়ে পড়ে।
লক্ষণ সেন পূর্ব বঙ্গের রাজধানী থেকে স্বাধীন ভাবে শাসন করতে থাকেন, তারপর সেনদের ক্ষমতায় আসেন তার বড় ছেলে বিশ্বরূপ সেন "অরিরাজ বৃষভাষ্কশঙ্কর গৌড়েশ্বর " উপাধি নিয়ে এবং ছোট ছেলে কেশব সেন "অরিরাজ অসহ্যশঙ্কর গৌড়েশ্বর" উপাধি নিয়ে প্রায় ২৫ বছর রাজত্ব করেন। এ সময়ের তাম্রলিপি থেকে তাদের উপাধি থেকে তাদের ক্ষমতা অনুমান করা যায় এবং মোটামুটি নিশ্চিত করা যায় তারা স্বাধীন ভাবে এই অঞ্চল শাসন করেছেন। মিনহাজ-ই-সিরাজের বইয়ে পূর্বের অঞ্চলে তুর্কিদের আক্রমণ দমনের বীরত্বের ইতিহাস ও জানা যায় । ১২৩০ সালের পরে আর কোন স্বাধীন সেন শাসকের নাম ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায় না। ১২৩০ সালের দিকে কেশব সেনের পরে উত্তরাধিকার দ্বন্দ্বে সেন সাম্রাজ্য ছোট ছোট ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে, দিল্লির ক্ষমতায় তখন তুর্কিরা, সেই সুবাদে এই অঞ্চলে তুর্কিদের প্রভাব বৃদ্ধি হলে এই ছোট ছোট সেন রাজারা ধীরে ধীরে তুর্কিদের বশ্যতা মেনে নিতে বাধ্য হয়। এভাবে ১২৬০ সালের এর মধ্যে সেন রাজ্যের ছোট ছোট অংশগুলো দিল্লির অধীনে চলে যায়।
সুতরাং এগুলো থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, ইতিহাসে সর্বশেষ স্বাধীন সেন সাম্রাজ্যের যে রাজার বিবরণ পাওয়া যায় তার নাম কেশব সেন।
নোট: ৪১ বিসিএস এ একটা প্রশ্ন ছিল এটা নিয়ে, প্রশ্নে খেয়াল করে দেখবেন সেন সাম্রাজ্য কে ১০৭০-১২৩০ সাল অবধি বলেছেন। লক্ষণ সেনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয় ১২০৫ সালে, সুতরাং তার পরেও ২৫ বছর এই সাম্রাজ্য স্বাধীন ভাবে টিকে ছিল এটা বুঝতে হবে। ইতিহাস মজার জিনিস, বিসিএস এর জন্য প্রচলিত গুলো বই পরে সঠিক ইতিহাস জানা যায় না, এমন কি আমাদের মাধ্যমিকের বোর্ড বইয়ের ইতিহাসেও এমন অসম্পূর্ণ ইতিহাস দেওয়া আছে, এর দায় কার?
এক নজরে সেন বংশ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর:
সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম রাজা কে ছিলেন?- সামন্ত সেন।
সেন বংশের শেষ রাজা কে ছিলেন?- কেশব সেন।
বিজয় সেন: শ্রেষ্ঠ রাজা
বিজয় সেন ছিলেন সেন বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। তিনি “পরমেশ্বর পরমভট্টারক” উপাধি ধারণ করেন।
লক্ষণ সেন:
বখতিয়ার খিলজী লক্ষণ সেনের আমলে নদীয়া আক্রমণ করেন।
বল্লাম সেন:
“দানসাগর ও অদ্ভুতসাগর” বল্লাল সেন রচনা করেন। তিনি “কৌলিন্য প্রথার” প্রবর্তন করেন।
রেফারেন্স:
বং থেকে বাংলা - রিজিয়া রহমান
বাংলাদেশের ইতিহাস - আর সি মজুমদার