#বিসিএস_ভাইভা
©Hasan Zahid
LLB(DU), LLM(DU)
মোবাইল কোর্ট কী?
মোবাইল কোর্ট হচ্ছে অপরাধের তাৎক্ষণিক শাস্তি দেওয়ার লক্ষ্যে গঠিত সংক্ষিপ্ত আদালত। যার বিচারক হচ্ছেন কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলতে সহকারী কমিশনার থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পর্যন্ত পদকে বোঝানো হয়েছে।
মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়েছে:
- আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, এবং
- অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রমকে কার্যকর করার জন্য;
আর উপরিউক্ত উদ্দেশ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অপরাধের তাৎক্ষণিক বিচার করে সীমিত দন্ড দিতে পারেন। এই আইনের আওতায় একজন ম্যাজিস্ট্রেট কোন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড দিতে পারেন। মোবাইল কোর্ট আইনে ১৭টি ধারা ও ১ টি তফসিল রয়েছে।
কারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারেন:
যে কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট তার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারবেন।
মোবাইল কোর্টের ক্ষমতা:
মোবাইল কোর্ট কোন অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড দিতে পারবেন। তবে অর্থ জড়িমানার ক্ষেত্রে সেই জড়িমানার সীমা থাকবে না। কারণ যখন যেই আইনের অধীনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে সেই আইনে যে জড়িমানার কথা বলা হয়েছে সেই অনুযায়ী জড়িমানা করতে হবে।
মোবাইল কোর্ট কর্তৃক কত টাকা জড়িমানা করা যায়?
মোবাইল কোর্ট কর্তৃক জড়িমানার পরিমাণ নির্দিষ্ট নেই।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) কি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারবেন?
- হ্যা ; জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারবেন।
মোবাইল কোর্ট পরিচালনা পদ্ধতি:
মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে এবং মোবাইল কোর্ট সেই অভিযোগ সংক্ষিপ্তভাবে লিখে তা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পড়ে ও ব্যাখ্যা করে শুনাইবেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হবে সে অভিযোগ স্বীকার করে কিনা।
- অভিযোগ স্বীকার না করলে, কেন স্বীকার করেন না তার ব্যাখ্যা চাইবেন। দোষ না পেলে অব্যাহতি দিবেন।
- অন্যদিকে অভিযোগ স্বীকার করলে সেই স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করে ২ জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদন্ডের আদেশ দিবেন।
মোবাইল কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল:
আপীল করা যাবে দুই ক্ষেত্রে। যথা:
-মোবাইল কোর্ট যদি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালনা করেন তাহলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট।
- মোবাইল কোর্ট যদি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালনা করেন তাহলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হবে জেলা দায়রা জজের নিকট।
দায়মুক্তি:
ধারা ১৪ অনুসারে, বিচার যদি সরল বিশ্বাসে তাহলে মোবাইল কোর্টের ভুল বিচারের ফলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মোবাইল কোর্টের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।
মোবাইল কোর্ট কী কী অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচার করে?
মোবাইল কোর্টে একটি তফসিল আছে। এই তফসিলে ১০৭ টি আইন আছে যেগুলোর আলোকে মোবাইল কোর্ট কোন অপরাধীকে তাৎক্ষণিক বিচার করেন। মোবাইল কোর্ট আইনে পেনাল কোডও আছে। তবে পুরো পেনাল কোড নেই। ক্ষুদ্র প্রকৃতির অপরাধের ধারাগুলো এখানে মোবাইল কোর্টের অধীনে দেয়া আছে। যেমন- অস্ত্রসহ বে-আইনী সমাবেশে প্রবেশ।
মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয় এমন কয়েকটি আইনের নাম বলুন?
মোবাইল কোর্টের তফসিলে বর্তমানে ১০৭ টি আইন আছে। এগুলো বাড়তে বা কমতে পারে। মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয় এমন কয়েকটি আইন হলো:
- জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪
- ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯
- বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ প্রভৃতি।
আরো কিছু তথ্যঃ
তত্ত্বাবধায়ক আমলে প্রথমে ছিল মোবাইল কোর্ট অধ্যাদেশ ২০০৭। পরে সেটি আইনে পরিণত হয় ২০০৯ সালে। মোবাইল কোর্টের তফসিল হচ্ছে এমন একটি বিধান যেখানে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা যে যে আইনের অধীনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন সেই আইনগুলো তফসিলে অন্তর্ভুক্ত থাকে। বর্তমানে ১১০ টি আইন আছে। কমতে বা বাড়তে পারে। অর্থাৎ প্রতি বছর ডিসি সম্মেলনের সময় ডিসিরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিভিন্ন আইনের অধীনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে চান। সেই হিসেবেই তফসিলে আইন অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে আইন কমতে বা বাড়তে পারে। মোবাইল কোর্ট অর্থাৎ পুরোপুরি কোর্ট নয়। সংক্ষিপ্ত কোর্ট। কারণ কাজ হচ্ছে বিচারিক কিন্তু সম্পন্ন করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন:
মোবাইল কোর্ট কী?
মোবাইল কোর্টের বিচারক কারা?
মোবাইল কোর্ট কী কী ধরনের শাস্তি দিতে পারে?
মোবাইল কোর্ট সর্বোচ্চ কত বছর কারাদন্ড দিতে পারেন?
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারেন?
মোবাইল কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল কোথায় করতে হয়?