#জাতিসংঘে_বঙ্গবন্ধু
✓জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক অনন্য ও মহত্তর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন সে দিনটি ছিল বুধবার।
✓ বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশন ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪ নিউইয়র্ক সময় বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ সময় ভোর ৩টায় বাংলা ভাষায় এ বক্তৃতা করেন।
✓বঙ্গবন্ধুই প্রথম জাতিসংঘে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করেন।
✓সাধারণ পরিষদের সভাপতি ছিলেন আবদুল আজিজ বুতাফ্লিকা, (আলজেরিয়া)।
✓বক্তৃতাটি ৪৫ মিনিটের।
✓বক্তৃতার ইংরেজি ভাষান্তর করেন তৎকালীন লন্ডনে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার ফারুক চৌধুরী। ছুটি কাটাতে দেশে থাকা জনাব ফারুক চৌধুরী কে হঠাৎ করে এই নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু এবং বলেন তোমার ছুটি বন্ধ আমার সাথে নিউইয়র্কে যাবে এবং জাতিসংঘে আমি বাংলায় যে বক্তৃতাটি করবো, তাৎক্ষণিকভাবে তুমি সেই বক্তৃতার ইংরেজি ভাষান্তর করবে। তখন জনাব ফারুক চৌধুরী ঘাবড়ে গিয়েছিলেন । তখন পরিস্থিতি সহজ করতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, রিহার্সাল দাও। বক্তৃতা ভাষান্তরের সময় ভাববে তুমি নিজেই প্রধানমন্ত্রী। তবে পরে কিন্তু তা ভুলে যেও।'
✓ বক্তৃতার পর "ডেলিগেট বুলেটিন" বঙ্গবন্ধু'কে "কিংবদন্তির নায়ক মুজিব" বলে আখ্যায়িত করে।
✓ বুলেটিনের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল- ' এ যাবত আমরা কিংবদন্তির নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের নাম শুনেছি। এখন আমরা তাঁকে কাজের মধ্যে দেখতে পাবো।
✓ বাংলায় বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা দেয়ার পর জাতিসংঘের বিবৃতি- " বক্তৃতায় ধ্বনিত হয়েছে মুজিবের মহৎকন্ঠ"
✓"বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় আমি আনন্দিত ও গর্বিত বক্তৃতাটি ছিল সহজ, গঠনমূলক এবং অর্থবহ"----জাতিসংঘের তখনকার মহাসচিব ড.কুর্ট ওয়াল্ডহেইম
✓"বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাস্তবিকই তিনি এক শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব।" - তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস কালাহান।
✓"শেখ মুজিবের মহৎকন্ঠ আমি গভীর আবেগ ভরে শুনেছি" --- বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্যান এল স্নেড।
✓"অতীতের অনগ্রসরতা, যুদ্ধের ধ্বংসলীলা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও প্রতিকূল বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভয়াবহ ফলশ্রুতি হিসেবে যে অসুবিধাজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অগ্রসর হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে তা বিশেষ গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়েছে।" ------ যুগোশ্লাভিয়ার উপ রাষ্ট্রপতি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. মিনিক।
✓২৯ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে এক আলোচনায় দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরলে জাতিসংঘ বাংলাদেশের ত্রাণকার্যে ৭০ লাখ ডলার সহায়তা প্রদান করেছিল এবং উপমহাসচিব ড. উমব্রাইখটকে বাংলাদেশের সমস্যার প্রতি বিশেষ নজর রাখার ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল।
✓১ অক্টোবর বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু তখনকার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন।
✓ এর আগে বেলা ১১টায় ওয়াশিংটনের রাষ্ট্রপতি অতিথিশালা ব্লেয়ার হাউসে বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের এ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম স্যাক্সবি।
✓ওইদিন বিকেল ৫টায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারা বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
✓ বঙ্গবন্ধুর সম্মানে নিউইয়র্ক সিটি হলে আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় নিউইয়র্কের মেয়র বঙ্গবন্ধুকে নগরীর চাবি উপহার দেন এবং বলেন 'এই উপহার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও জনগণের প্রতি আমেরিকার জনগণের শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্বের নিদর্শন। প্রত্যুত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, "বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা আত্মদান করেছেন সেসব শহীদের আর সাড়ে সাত কোটি বাঙালির পক্ষ থেকে এই চাবি গ্রহণ করে আমি সম্মানিত বোধ করছি"।
✓২ অক্টোবর সকালে সিনেটর কেনেডি ও জর্জ ম্যাকভার্ন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পৃথক পৃথক সাক্ষাৎকারে মিলিত হন।
✓বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধুর সম্মানে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির পক্ষে নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
✓ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে বঙ্গবন্ধু'র সাথে সফর সঙ্গী ছিলেন বঙ্গবন্ধু'র রাজনৈতিক সেক্রেটারি তোফায়েল আহমেদ, পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ড. নুরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু'র ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাঃ নূরুল ইসলাম, গ্যাস ও অয়েল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এর চেয়ারম্যান ড. হাবিবুর রহমান, এম আর সিদ্দিকী এম.পি, আসাদুজ্জামান খান এমপি, দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সহ মোট ২৪ জন।
✓২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল সাড়ে সাতটায় বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন বঙ্গবন্ধু।
✓ লন্ডনে যাত্রাবিরতি র পর ঐদিন রাতে প্যান অ্যামের নিউইয়র্ক ফ্লাইটে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় নিউইয়র্কের কেনিডি বিমান বন্দরে পৌঁছান।
✓ সেখানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত হোসেন আলী এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এস. এ. করিম বঙ্গবন্ধুকে বিমান বন্দরে সংবর্ধনা জানান।
✓ বঙ্গবন্ধু নিউইয়র্কের 'ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়ায়' অবস্থান করেন
✓ হোটেলে বঙ্গবন্ধু'কে দেখার জন্য দর্শনার্থীদের আগমন ছিল চোখে পড়ার মতো। অধিবেশনে আগত প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ লোকজন ও বঙ্গবন্ধু'কে দেখার জন্য ভিড় জমাতো।
✓ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার হোটেল কক্ষে এসে বঙ্গবন্ধু'র সাথে সাক্ষাৎ করেন।
✓ বঙ্গবন্ধু'র জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যখন বক্তৃতা করেন তখন ছিল নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা বাংলাদেশ এর স্থানীয় সময় রাত ৩টা।
✓ বাংলাদেশকে জাতিসংঘের ১৩৬ তম সদস্য ঘোষণা করা হয় ঐ বছর ১৮ সেপ্টেম্বর, বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায়।
✓ এই ঘোষণাটি শোনার অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন " আমি সুখি হয়েছি যে, বাংলাদেশ জাতিসংঘে তার ন্যায্য আসন লাভ করেছে। জাতি আজ গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তাদের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন"।
✓ বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের সম্পর্কের সূচনা হয় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকে।
✓ ১৯৭১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৬তম অধিবেশনে মুজিবনগর সরকারের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দলকে পাঠানো হয়।
✓১৯৭২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশ সদস্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে তৎপরতা চালায়। কিন্তু জুলফিকার আলী ভুট্টোর সময়ে পাকিস্তান সরকারের প্ররোচনায় নিরাপত্তা পরিষদে চীনের ভেটো প্রয়োগের কারণে পর পর দু'বার বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য হতে ব্যর্থ হয়।
✓ বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ১৩৬ তম সদস্য হিসেবে জাতিসংঘে যোগদান করে।
✓ যোগদানের এক সপ্তাহ পর ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় ভাষণ দেন।
সংগ্রহ: নূর হোসাইন রাজীব
বিবিএ, এমবিএ( ব্যবস্থাপনা)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ।
সূত্র:
বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় আজ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ প্রকাশিত তোফায়েল আহমেদ এর প্রবন্ধ ।
তোফায়েল আহমেদ-- আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, সভাপতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।
তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে "বঙ্গবন্ধু" উপাধিতে ভূষিত করেন তৎকালীন এই ছাত্র নেতা ।