রিটেন এবং ভাইভাতে প্রশ্ন আসে সাংবিধানিক পদ এবং সাংবিধানিক সংস্থা নিয়ে।
নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হল--
বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় ৭ টি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা রয়েছে। এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশ সরকারের আইনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের আইনি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
১.নির্বাহী বিভাগ বা এক্সিকিউটিভ :
রাস্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে শাসন বা নির্বাহী বিভাগ গঠিত হয়। জণগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সকল জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসক, আমলা, কেরানি সবাই এক্সিকিউটিভ বডির অংশ। এক্সিকিউটিভ বডি সরকারের সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। এর প্রধান হলেন ' মাননীয় প্রধানমন্ত্রী '
সংবিধানের ৪র্থ ভাগের ৪৮ থেকে ৬৪ পর্যন্ত অনুচ্ছেদে এর সকল গঠন ও কার্যাবলী রয়েছে।
২. আইন বিভাগ বা লেজিসলেচার:
বাংলাদেশের আইনসভার নাম জাতীয় সংসদ। এটি এক কক্ষীয়, এবং ৩০০ জন সংসদ সদস্য জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। এছাড়া নারীদের জন্য ৫০ টি সংরক্ষিত আসনের বিধান রয়েছে, যেসব আসন সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে বণ্টিত হয়। এর প্রধান হলেন
' মাননীয় স্পিকার '
সংবিধানের ৫ম ভাগের ৬৫ থেকে ৯৩ পর্যন্ত অনুচ্ছেদে এর সকল গঠন ও কার্যাবলী রয়েছে।
৩.বিচার বিভাগ বা জুডিসিয়ারি:
বিচার বিভাগও একটি সাংবিধানিক সংস্থা। বিচার বিভাগ বলতে মূলতঃ সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতসমূহকে বোঝায়। এর প্রধান হলেন 'প্রধান বিচারপতি '
এটি ২ স্তরে বিভক্ত ----
১. আপীল বিভাগ ২. হাইকোর্ট বিভাগ
আপীল বিভাগ দেশের সর্বোচ্চ দেশের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় সংস্থা।
সংবিধানের ৬ষ্ঠ ভাগের ৯৪ থেকে ১১৭ পর্যন্ত অনুচ্ছেদে এর সকল গঠন ও কার্যাবলী রয়েছে।
৪.এটর্নি জেনারেলের কার্যালয়:
সংবিধানের ৪র্থ ভাগের ৬৪(১)(২)(৩)(৪) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সুপ্রীম কোর্টের বিচারক হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন কোন ব্যক্তি এটর্নি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন এবং কার্যাবলী সম্পাদন করেন।
৫.নির্বাচন কমিশন সচিবালয়:
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রয়োজন সাপেক্ষে কয়েকজন নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের বিধান রয়েছে। রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের (প্রয়োজন সাপেক্ষে) নিয়োগ দেবেন। চাকরির মেয়াদকাল হবে তার প্রথম কার্য দিবস হতে পরবর্তী ৫ বছর কাল। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সংবিধানের ৭ম ভাগের ১১৮ হতে ১২৬ ধারা মোতাবেক ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়।
৬.কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল (সিএজি) এর কার্যালয়:
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল (সিএজি) এর কার্যালয়কে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করে। সিএজি কর্তৃপক্ষের অধীনে প্রজাতন্ত্রের সরকারি একাউন্টস, সরকারি এজেন্সি, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং পাবলিক কোম্পানিসমূহের অডিট পরিচালনা করা হয় এবং তা সংসদে উপস্থাপিত হয়। এই কার্যালয় সংবিধানের ৮ম ভাগের অনুচ্ছেদ ১২৭ থেকে ১৩২ মোতাবেক সাংবিদানিক দায়িত্ব পালন করে।
৭.বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি):
বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি) বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় প্রতিষ্ঠিত একটি আধা বিচারিক সংস্থা। এটি সংবিধানের ১৩৭ থেকে ১৪০ অনুচ্ছেদ এবং আরও কিছু সরকারি বিধি-বিধান অনুসারে কাজ করে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৯ টি সাংবিধানিক পদ রয়েছে-------
ব্রাকেটে সংবিধানের অনুচ্ছেদ নাম্বার দেয়া হল
১. রাষ্ট্রপতি(৪৮)
২. প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী (৫৫/৫৬)
৩. প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিগণ (৯৪/৯৫)
৪. স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার (৭৪)
৫. নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার(১১৮)
৬. সরকারি কর্মকমিশন চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ(১৩৭)
৭. মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (১২৭)
৮. সংসদ সদস্যগণ (৬৫/৬৬)
৯. অ্যাটর্নি জেনারেল (৬৪)
★ Note 1: ন্যায়পালও (৭৭) একটি সাংবিধানিক পদ
ন্যায়পাল পদ সংবিধানে থাকলেও এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে নিয়োগ দেয়া হয়নি।
★Note 2: অনেকে কনফিউশানে থাকতে পারেন এটর্নি জেনারেল কি সাংবিধানিক পদ? সংবিধানের ৩য় তফসিল অনুযায়ী তো এটি সাংবিধানিক পদ না।
জ্বি, এটিই একমাত্র সাংবিধানিক পদ যেটিকে শপথ পড়তে হয় না।
★ Note 3: প্রধানমন্ত্রীসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ পদ/ব্যক্তিকে মাননীয় বলে সম্বোধন করা হয়, শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতিকে মহামান্য বলে সম্বোধন করা হয়।
★ভুল থাকলে জানাতে পারেন, সংশোধন করা হবে
Niloy Sen Gupta