আন্তর্জাতিক রাজনীতি
“ সংযুক্ত আরব আমিরাত-ইসরায়েল চুক্তিঃ ফিলিস্তিনিদের কফিনের শেষ পেরেক”
13 আগস্ট, আরব বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সাথে একটি শান্তি চুক্তি করেছে, যে চুক্তির আওতায় এই দুই দেশ পরবর্তীতে বিনিয়োগ, পর্যটন, বিমান চলাচল, নিরাপত্তা, টেলিযোগাযোগ, প্রযুক্তি, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও দূতাবাস স্থাপনের লক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করবেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক হবে স্বাভাবিক। ফিলিস্তিনের 55 শতাংশ ভূমি নিয়ে 1948 সালের 14 মে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইহুদিদের আগ্রাসন ও অবৈধ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আরব দেশ সহ পুরো মুসলিম বিশ্ব সোচ্চার হয়, সংঘটিত হয় 1948, 1956, 1967, ও 1973 সালের 4 চারটি আরব ইসরাইল যুদ্ধ। এরপর ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি অনুসারে প্রথম আরব দেশ মিশর ইসরাইলের সাথে শান্তি চুক্তি করে 1979 সালে । দ্বিতীয় আরব দেশ হিসেবে জর্ডান 1994 সালে ইসরাইলের সাথে শান্তি চুক্তি করে। 1994-2020 এই দীর্ঘ 26 বছর পর তৃতীয় দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত মুসলমানদের হৃদয় ভেঙে ফিলিস্তিনিদের কফিনে শেষ পেরেকটি বসিয়েছে, স্বীকৃতি দিয়েছে ইহুদিদের অবৈধ দখলদারিত্ব ও আগ্রাসনের। মধ্যস্থতাকারী আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চুক্তিটি সম্পূর্ণ করেই ঘোষণা দিয়েছেন এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। আরব ও মুসলিম দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন— বরফ যেহেতু বলেছে এখন আমরা আশা করব আরও অনেক আরব এবং মুসলিম দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অনুসরণ করবে। অন্যদিকে চুক্তি সম্পন্ন করে আরব আমিরাতে দাবি করেছে এই চুক্তির পর থেকে ইজরায়েল পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন করবে না। তবে তাদের এই বক্তব্য কতটুকু সত্য তা নেতানিয়াহুর দেওয়া এক ভাষণে স্পষ্ট হয়। তিনি তার দেশের একটি গণমাধ্যমকে জানান— ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা বাদ দেয়া হয়নি এটি স্থগিত করে রাখা হয়েছে মাত্র।
এখন, মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়া কি?
মুসলিম বিশ্ব এখন আর এক জুটে নেই। বলয়ে বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সৌদি আরব-আরব আমিরাত-বাহারাইন-ওমান এই বলয়ের সবাই চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়েছে। বাহারাইন স্বাগত জানিয়ে ধন্যবাদ দিয়েছে ট্রাম্পকে। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেছেন— এই চুক্তির পর থমকে যাওয়া মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনা নতুন করে শুরু হতে পারে। মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি স্বাগত জানিয়েছেন। ওমান এই চুক্তির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। অপরদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি একে বিপদজনক ও আরব আমিরাতের বোকামি বলে উল্লেখ করেছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান আরব আমিরাতের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি মক্কা ও মদীনার নিয়ন্ত্রণকারী সৌদি আরব।
ফিলিস্তিন কি বলছে এই চুক্তি নিয়ে?
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন— এটি জেরুজালেম, আল-আকসা এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসও এটিকে ফিলিস্তিনি জনগণের পিঠে ছুরিকাঘাত বলে উল্লেখ করেছেন। আরব মুসলিম দেশগুলোর সমর্থনে এখনো ফিলিস্তিনের তরুণেরা স্বাধীন ফিলিস্তিন এর স্বপ্ন দেখে, কিন্তু যখন মুসলিম দেশগুলো ইজরায়েলের সাথে আঁতাতে লিপ্ত হয়, তখন তাদের শেষ অংশটুকুও নিভে যায়।
এখন, ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর কি লাভ রয়েছে এই চুক্তিতে?
সম্প্রতিককালে আমেরিকার যতজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় এসেছেন, সবাই ইসরাইলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ইজরায়েলের দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন সামনের নির্বাচনে তাদের সমর্থন ও ভোট পেতে বড় ভূমিকা পালন করবে এই চুক্তি। এমনকি ট্রাম্পের অনেক সিদ্ধান্তে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেন বিরুদ্ধাচারণ করলেও এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। আর ইসরাইলে দুর্নীতির অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠেছে। জনগণকে সেখান থেকে মনোযোগ অন্যদিকে ফেরাতে এটি কাজে লাগবে।
_এন রহমান
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অবলম্বনে
