🔥🔥বিসিএস রিটেনঃ পরীক্ষা ও প্রস্তুতি-১🔥🔥
বিসিএস রিটেন, বিসিএস পরীক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই একটি ধাপই আপনার স্বপ্নপূরণের ক্ষেত্রে ৮০ ভাগ গুরুত্ব বহন করে। কাজেই এই স্তরে আপনাকে সর্বোচ্চ পরিশ্রম আর সুতীক্ষ্ণ পরিকল্পনার মাধ্যমে আপনার ১০০ ভাগ দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
গত কিছুদিন ধরে আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা রিটেন প্রস্তুতি নিয়ে কিছু লিখতে বলতেছেন। রবি-বৃহস্পতি ১০-৬ টা অফিস করে ক্লান্ত থাকার কারনে আর মন চায় না লিখতে। যাই হউক ২ পর্বে আমি এই লেখা শেষ করবো।
প্রথমেই বলে রাখি, দিনের শুরুতে সফলতার নির্দিষ্ট কোনো কৌশল থাকে না, দিন শেষে যে বা যারা সফল হয় তাদের কৌশলকেই সফলতার কৌশল হিসেবে গন্য করা হয়। আমি এখানে আমার প্রস্তুতি নেয়ার আলোকে আলোচনা করছি।
গত কিছুদিন অনেকেই ৪১তম রিটেনের প্রস্তুতি নেয়ার বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছেন। তাদের বলছি, আরে ভাই এখনো ৪১ তম প্রিলিই হয়নি, রিটেন নিয়ে এত ব্যস্ত হওয়ার আবশ্যকতা নেই। অনেকেই বলে প্রিলি পর্যাপ্ত পড়া হয়ে গেলে রিটেন প্রস্তুতি নাও। কিন্তু কতটুকু পড়াকে প্রিলির জন্য পর্যাপ্ত বলা যায় সেটা আমার মাথায় আসে না! একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, বিসিএস এমন একটা পরীক্ষা যেখানে ৩৮ তম বিসিএসে পুলিশ বা এডমিন পাওয়া ছেলেটা ৪১ তম প্রিলিতে টিকবে তারই কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এবার আসি আমার কথায়, আমি প্রিলির সময় প্রিলিই পড়েছি আর রিটেনের সময় রিটেন। আপনি প্রিলি দেয়ার পূর্বেই রিটেনের প্রস্তুতি নিলেন আর এদিকে প্রিলিতে টিকলেনই না, তাতে কি লাভ হলো। ভাই নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন, রিটেনের জন্য যতটুকু সময় পাবেন, আপনার জন্য ততটুকুই যথেষ্ট যদি আপনি পরিকল্পিতভাবে পড়াশোনা করেন। যদিও ৩৭ তম এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম, তখন মাত্র ৩ মাস সময় পেয়েছিলাম। একটা কথা মাথায় রাখবেন, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিতে যথার্থ পরিকল্পনার গুরুত্ব খুব, খুব, খুবই বেশি।
আমিতো বলবো প্রতিদিনের পড়ার রুটিনের ২০% সময় ব্যায় করুন আপনার পরিকল্পনা গুলোকে শান দিতে! কোন ব্যুহ রচনা করবেন, কিভাবে করবেন, কোন ব্যুহ আপনাকে বিজয় এনে দিবে। শুধু পড়াশোনা নয়, বিসিএস নিয়ে প্রতিদিন নিজের সাথে নিজে খেলা করুন। বিশ্বাস রাখুন নিজের অজান্তেই অনেকটা এগিয়ে যাবেন।
বিসিএস রিটেনের জন্য আমি প্রফেসরস এর এক সেট বই, প্রতিদিনের পেপার, মাসিক কারেন্ট এ্যফেয়ার্স, আর ক্যামব্রিজ আইইএলটিএস ৭,৮,৯ বইগুলো পড়েছিলাম। অবাক লাগলেও খুবই সত্য ৭,৮,৯ বই তিনটি আমার ইংরেজি প্রস্তুতির ৯৫ ভাগই সমাপ্ত করে দিয়েছিল। মনে রাখবেন ইংরেজিতে ২০০ মার্ক, আর আমরা সিংহভাগই ইংরেজিতে দূর্বল। কাজেই ইংরেজি বিষয়টি ক্যাডার পাওয়া না পাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই প্রভাব বিস্তার করে। তাছাড়া রিটেনে প্রথমেই ইংরেজি পরীক্ষা হয়, ফলে ইংরেজিতে ভালো করা যেমন আত্মবিশ্বাস দৃঢ় করে তেমনি খারাপ করাও আত্মবিশ্বাসকে তলানিতে নিয়ে যায়। যার প্রভাব পরবর্তী পরীক্ষা গুলোতে পড়ে।
৩৮ তম বিসিএস পরীক্ষার কথাই ধরুন, ইংরেজি প্রশ্ন খুব কঠিন হয়েছে বলেই সিংহভাগের মত। আমি ইংরেজি পরীক্ষার পর অনেককেই বলতে শুনেছি ৩৮ তম শেষ! ইংরেজি যা হয়েছে তাতে আর বিসিএস লাগবে না!!
এবার একটা গোপন কথা বলি, ইংরেজিতে ভালো করা অন্য যেকোনো বিষয় থেকে সহজতর! বিশ্বাস হচ্ছে না তো, বিশ্বাস করুন এটাই সত্যি!
কিভাবে? কেন??
ইংরেজি আমাদের মাতৃভাষা নয়, আমরা কেউই ইংরেজির জাহাজ হই, এটাও ইংরেজি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্দেশ্য নয়। আর যাই হউক বাংলার ২০০ এর চেয়ে, ইংরেজির ২০০ থেকে অধিক মার্ক পাওয়া সহজতর। সহজভাবে একটি বিষয় অনুধাবন করুন, একজন বিজ্ঞানের ছাত্রকে নিউটনের তৃতীয় সূত্র জিজ্ঞেস করা হলো, সে ভুল উত্তর দিলো। একই প্রশ্ন একজন মানবিকের ছাত্রকে জিজ্ঞেস করা হলো, সেও ভুল উত্তর দিলো। কার উত্তরটিকে অধিক অপরাধের গন্য করা হবে, নিশ্চয়ই বিজ্ঞানের ছাত্রের। কারণ এটাই তার ক্ষেত্র, সে কেন ভুল করবে।
ঠিক এমনটাই ঘটে বাংলা আর ইংরেজির ক্ষেত্রে। ইংরেজিতে আমাদের নিকট পরীক্ষক সীমাহীন প্রত্যাশা করেন না, কাজেই এই সুযোগটি যথার্থভাবে কাজে লাগিয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নেয়া যায়। শুধু ইংরেজি নয়, প্রত্যেকটি বিষয়েই যথার্থ পরিকল্পনা আপনার পড়াশোনার পরিধি অর্ধেকে নামিয়ে আনবে।
একটা কথা খুবই সত্য, "যে পরিকল্পনা করে না, সে নিজের অজান্তেই ব্যার্থতার পরিকল্পনা করে ফেলে। "
লেখাটি খুবই দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে, অচিরেই আমার রিটেন প্রস্তুতির A to Z নিয়ে লিখবো। আজ এ পর্যন্তই।
একটি কথা বলে শেষ করছি, আমার আর আপনার মধ্যে কোনো আকাশ -পাতাল পার্থক্য নেই। পার্থক্য শুধু কিছু পরিকল্পনার! কিছু পরিশ্রম!! আর কিছু সময়ের সদ ব্যবহারের!!! বিশ্বাস রাখুন আগামীকালের ভোরটা আপনার হবে। আর তার জন্য যা করার তাই করুন। একটি কথা মাথায় রাখবেন সবসময়, "পরিশ্রম প্রতারণা করে না।"
সবার জন্য প্রার্থনা রইলো, আমায় আশীর্বাদ করবেন সবাই। ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন।
তপন সরকার রাজ
বিসিএস পুলিশ, সুপারিশ প্রাপ্ত
মেধাক্রম ৩২,
৩৮ তম বিসিএস।
