৩৮তম ভাইবা অভিজ্ঞতা
রোল ছিল অনেক পরে। ধুম করে ভাইভার ডেট দিয়ে দিল। আমার ডেট পড়ল ৩১ জুলাই। ডকুমেন্টস ও তখন ঠিকঠাক মত গুছানো হয় নি। তারপরেও সব ঠিক চলছিল। এর মধ্যে ২৬ তারিখে জানতে পারলাম যে ডেঙ্গু হয়েছে। ব্যাস। আর কি লাগে। সব দিক দিয়ে সোনায় সোহাগা হয়ে গেল। একে তো কিছুই পারি না তারপরে ডাক্তার দেখাতে আর টেস্ট করতেই সময় শেষ। টেনশনে ছিলাম যে ভাইভা দিতে পারব নাকি। যাক আলহামদুলিল্লাহ ভাইভাতে উপস্থিত হতে পেরেছি।
.
বোর্ডঃ হামিদুল হক স্যার
প্রার্থীঃ আহাদ পারভেজ
সিরিয়ালঃ ৮ (১২)
ভার্সিটিঃ চুয়েট
বিভাগঃ যন্ত্রকৌশল
নিজ জেলাঃ জয়পুরহাট
চয়েসঃ এডমিন, পুলিশ, অডিট
তারিখঃ ৩১.০৭.২০১৯
ঠিক নামাজের আগ মুহূর্তে আমি বোর্ডে ঢুকলাম।
আমিঃ May I come in sir? বলে আমি দরজার সামনে দাঁড়ায় আছি।
স্যারঃ প্রায় ৩০ সেকেণ্ডের উপর আমার দিকে তাকায় থেকে বলল " আসো।"
আমিঃ ভিতরে গিয়ে সালাম দিয়ে চেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
স্যারঃ তোমার বাড়ী তো জয়পুরহাট। তো জয়পুরহাটের
কই বাবা?
আমিঃ স্যার খঞ্জনপুর।
স্যারঃ রবীন্দ্রনাথের "এই গাঁয়ে" আবৃত্তি করতে লাগলেন " আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা" বলে এবং "আমাদের সেই তাহার নামটি " বলে থেমে আমার দিকে তাকালেন
আমিঃ "রঞ্জনা" বলে স্যারের দিকে তাকালাম। এতক্ষন
পরে স্যারের মনে হইলো যে আমি দাঁড়ায় আছি। আমাকে বসতে বললেন। আমি Thank you sir বলে বসলাম।
স্যারঃ তা বাবা তোমার এলাকায় তো একজন কুখ্যাত রাজাকার আছে নাম কি বলো?
আমিঃ আব্দুল আলীম।
স্যারঃ আবদুল আলীম কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের অত্যাচার করত জানো?
আমিঃ সরি স্যার। স্যার তখন বলে দিলেন কিভাবে আলিম আকাম কুকাম করত।
স্যারঃ আচ্ছা বাবা তোমার সম্পর্কে একটু ইংরেজিতে বলো?
আমিঃ বললাম।
স্যারঃ তোমার বাবা কি করত আবার জিজ্ঞেস করলেন? (ইংরেজিতে)
আমিঃ বললাম
স্যারঃ নুর হোসেন কে ছিলেন? ( ইংরেজিতে)
আমিঃ বললাম।
স্যারঃ আচ্ছা বাবা বলো তো পৃথিবীতে বায়ুমণ্ডলে কয়টা স্তর আছে?
আমিঃ বললাম যে স্যার ৪ টা স্তর আছে। তারপর স্যার বলল " ওজোন স্তর এগুলার মধ্যে কোনটাতে আছে?"
আমিঃ বললাম
স্যাররা এই অবস্থাতে ওজোন স্তর নিয়ে একটু জ্ঞান দিলেন। আমি হ্যাঁ হু করলাম। যেহেতু আমি ফ্রিজ বানানোর কাজ করি সেহেতু আমাকেও দায়ী করলেন ওজোন স্তর ক্ষতির জন্য।
আমিঃ অবশ্যই স্যার। 😉
স্যারঃ ধুম করে জিজ্ঞেস করলেন "তারে জমিন পার দেখছো?" থিম কি বলো? (ইংরেজিতে)
আমিঃ বললাম।
স্যারঃ এখন যে চাকরি করো কত বেতন পাও? আমি বলার পরে স্যার বলল এত টাকা দিয়ে কি করো? তোমার বয়সে আমি এই কয় টাকা বেতন পেতাম।
আমিঃ স্যার আমি তো বিবাহিত। স্যার কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। হয়তো স্যার ভাবেন নি যে আমি আসলে বুইড়া। 🙄
এরপরে চেয়ারম্যান স্যার ওজু করতে চলে গেল। আর স্যারকে দেখি নি।
এক্স-১ঃ জয়পুরহাটের আশেপাশে দর্শনীয় স্থান কি আছে বলো?
আমিঃ পাহাড়পুর বলার পরে স্যার মহাস্থানগড়ের নাম বললেন এবং বললেন মহাস্থানগড় গিয়েছি কি না?
আমিঃ বললাম।
স্যারঃ মহাস্থানগড়ের আগের নাম বলো?
আমিঃ বললাম পুণ্ড্রনগর।
এক্স-২ ম্যামঃ যুদ্ধের সময় যে কনসার্ট আয়োজন করেছিলেন দুইজন শিল্পী নাম বলো?
আমিঃ বললাম।
ম্যামঃ তাদের মধ্যে কিভাবে যোগাযোগ হয়েছিল বলো?
আমিঃ সরি স্যার। পরে ম্যাম এ বিষয়ে একটু জ্ঞান দিলেন। গল্প করলেন।
ম্যামঃ আচ্ছা গান তো শোনো। তা কি গান শোনো? বাংলা, হিন্দি নাকি ইংলিশ?
আমিঃ স্যার বাংলা, ইংলিশ।
ম্যামঃ ইংলিশ কার গান শোনো?
আমিঃ আয়রন মেইডেন, গান্স এন রোজেস বলতেই ম্যাম থামায় দিলেন।
ম্যামঃ আচ্ছা আইরন মেইডেন এর ফিয়ার অব দ্যা ডার্ক এর ভাবার্থ কি বলো? 😎😎 (ইংরেজিত)
আমিঃ কিছুক্ষণ তব্দা খায়া থাকলাম এই প্রশ্ন শোনার পর। তারপর ভুজুং ভাজুং ( ইংরেজিতে)
ম্যামঃ আচ্ছা বাবা গান্স এন রোজেস এর একটা ফেমাস সং আছে বলো তো??
আমিঃ প্রথমে মনে করতে পারছিলাম না পরে বললাম নভেম্ভর রেইন। ম্যাডাম হাসতেছিল। বুঝলাম না। 🤔
এক্স-১ঃ আচ্ছা তুমি তো এখন এইখানে চাকুরী করো তা রেখে বিসিএসে কেন আসবা?
আমিঃ বিশাল গ্যাজ মারলাম।
এরপরে স্যার ম্যামরে জিজ্ঞাস করল কিছু জিজ্ঞেস করবেন কি না? দুইজনেই সম্মত হলো যে না আমার সাথে আর কথা বলবেন না এবং আমাকে ছেড়ে দিলেন।
আমিঃ ধন্যবাদ স্যার বলে সালাম দিয়ে চলে আসলাম।
চেয়ারম্যান স্যার তখনও ওজু করছিলেন। 😥😥
এই ছিল আমার ভাইভা।
একটা কোশ্চেন সাব্জেক্ট কিম্বা ক্যাডার চয়েস থেকে ধরেন নাই। ১০ মিনিট ছিলাম মে বি। লাঞ্চের আগে ছিল দেখে স্যাররাও মে বি বেশি কিছু আস্ক করে নাই। ইনফ্যাক্ট আমি বুঝিই নাই কি ভাইভা দিছি৷ ভাইভা নিয়ে বেসিকালি আমি হতাশ। শুধু না প্রচুর হতাশ।😥
বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। অসুস্থ ছিলাম অনেক। ভাইভা এটেণ্ড করতে পারছি এতেই আলহামদুলিল্লাহ।
বিদ্রঃ কাগজপত্র অরিজিনাল গুলা সবগুলান নিবেন আর সঙ্গে যেগুলান ফটোকপি নিতে বলছে ওইগুলার ৪ কপি করে নিয়ে যাবেন সত্যায়িত করে তাহলেই হবে (ফর সেফটি)। কোনো প্যারা নাই। সিরিয়াল, স্ট্যাপলার সব উনারাই করে দিবেন। আপনি খালি কষ্ট করে কাগজপত্র নিয়ে যাবেন।
* *বিপিএসসি ফর্ম-২ বলে কিছু নাই।
* *প্রাইভেট জব যারা করেন তাদের কোনো NOC লাগবে না।