আমি ধরে নিলাম, আপনি অনার্স প্রথম বর্ষে আছেন এবং হৃদয়ে ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন লালন করেন। যা করবেন...
ক) আপনার নিজ বিভাগের পড়াশোনার ওপর নির্ভর করবে আপনি কতটুকু সময় বিসিএসকে দেবেন। আপনি যদি খুব ব্যস্ত বিভাগের শিক্ষার্থী হন, তবে সময় কম দেবেন।
খ) আপনার বর্ষের ওপর নির্ভর করবে বিসিএস প্রস্তুতির গতি। প্রথম বর্ষের গতির চেয়ে চতুর্থ বর্ষের গতি অবশ্যই বেশি হবে।
গ) নিজ বিভাগকেও অবহেলা করবেন না। পর্যাপ্ত সময় সেখানেও দেবেন। বাজে কাজে সময় নষ্ট না করলে আশা করি ভালো সময়ই পাবেন।
ঘ) বিসিএসে বিভাগের সিজিপিএরও গুরুত্ব আছে। এটা ভাইভাতে কাজে দেবে। তবে শুধু সিজিপিএ দিয়েও বিসিএস হবে না। ৩.০০–এর মতো থাকলেই আর অসুবিধা হয় না। আর বেশি থাকলে তো ভালোই।
ঙ) জাতীয়, পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তেমন বৈষম্য করা হয় না। কারণ, কর্তৃপক্ষ আপনাকে বিচার করবে; বিশ্ববিদ্যালয় নয়। তাই হতাশ বা বেশি খুশি হওয়ার প্রয়োজন নেই।
চ) প্রথম বর্ষে থাকতেই বিসিএসের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভার সিলেবাসটা খুব ভালো করে পড়ে নেবেন। এতে কোন ধরনের বিষয় অন্তর্ভুক্ত, তা বুঝে আগাতে পারবেন।
ছ) প্রথম বর্ষের শেষের দিকে বিগত বিসিএসের প্রশ্নগুলো বিশেষ করে প্রিলির প্রশ্ন ব্যাখ্যাসহ পড়বেন। লিখিত প্রশ্নগুলো দেখবেন।
জ) দ্বিতীয় বর্ষে যখন আসবেন তখন বেসিক বই বিভাগের ফাঁকে ফাঁকে পড়বেন। যেমন বাছাই করে ক্লাস সিক্স টু টেন বোর্ডের বই। উচ্চমাধ্যমিকের কম্পিউটার ও পৌরনীতিও পড়বেন। অবশ্যই ধীরে ধীরে ও বুঝে বুঝে পড়বেন।
ঝ) সম্ভব হলে একাডেমিক কোচিংয়ে পড়ান বা টিউশন করান। সেটা একটি বা দুটি। বাংলা, বিজ্ঞান, ইংরেজি ও গণিত পড়ান। নিজেরও কাজে লাগবে। সঙ্গে সঙ্গে কথা বলার জড়তা কাটবে, যা ভাইভায় কাজে লাগবে।
ঞ) তৃতীয় বর্ষে এসে কিছু মৌলিক বই পড়ে নিন। যেমন ১. অসমাপ্ত আত্মজীবনী (শেখ মুজিবুর রহমান) ২. বাংলাদেশের ইতিহাস (১৯০৫-১৯৭১) [ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন] ৩. লাল নীল দীপাবলি (ড. হুমায়ুন আজাদ) ৪. বিশ্বরাজনীতির ১০০ বছর (ড. তারেক শামসুর রেহমান) ইত্যাদি।
ট) চতুর্থ বর্ষের প্রথম থেকে প্রিলির জন্য বিষয় ধরে গাইড পড়া শুরু করুন। প্রতিটি বিষয়ের জন্য একটি করে গাইড হলেই যথেষ্ট।
ঠ) পাশাপাশি পূর্বে যে বইগুলো পড়েছেন, তা থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো চতুর্থ বর্ষে এসে রিভিশন দেবেন।
ড) লিখিত ও ভাইভার জন্য যে তথ্যগুলো দরকার, তা আপনি বেসিক বইগুলোতে পড়ে এসেছেন।
ঢ) এরপর লিখিত ও ভাইভার সময় বিষয়ভিত্তিক কিছু গাইড সংগ্রহ করে নেবেন। আর মৌলিক বই তো পড়া আছেই।
ণ) সাধারণ জ্ঞানের বিষয়গুলো একটু পরে পড়া উত্তম। কারণ, তা অনেক পরিবর্তিত হয়।
ত) যা পরিবর্তিত হয় না যেমন বিজ্ঞান, গণিত, ইংরেজি আপনি প্রথম বর্ষ থেকেই নোট করতে পারেন।
থ) কোনো বিষয়ে দুর্বল থাকলে তা প্রথম থেকেই ভালো করে পড়া উচিত। যেমন গণিত ও ইংরেজিতে অনেকেই দুর্বল। আগে থেকে পড়লে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
দ) দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করুন প্রথম বর্ষ থেকেই।
ধ) ধীরে ধীরে ইংরেজি শব্দের অর্থও পড়া শুরু করুন। কারণ, তা সহজে আয়ত্তে আনা যায় না।
ন) পড়ার সময় তাড়াতাড়ি বই শেষ করার চেষ্টা করবেন না। বিষয়টির গভীরে ঢোকার চেষ্টা করুন। ধারণা পরিষ্কার থাকলে যেকোনো আকারে লিখতে পারবেন।
এভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারলে আশা করি প্রথম বিসিএসেই কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পাওয়া সম্ভব। এতে আপনার ওপর একসঙ্গে অনেক চাপ পড়বে না। তাই ভালো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে। আর জানেনই তো, “Slow and steady wins the race”. (চলবে)
শাহ্ মো: সজীব
৩৪ তম বিসিএস ( প্রশাসন- ২য় স্থান)