জীবনের ১ম ভাইভা। খুব পার্ট নিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম পিএসসি’র সামনে। একটু পর এক বন্ধু বললো তোর ফাইল কই!! তখন আমি 😟😟😟
তারপর বন্ধু উবারের ভাইকে ফোন দিলো আর আমি দৌড়াইলাম। অবশেষে ভাইজান আমাকে কাগজপত্র ফেরত দিয়ে উদ্ধার করলো। আর ৫ মিনিট পরে হলে হয়তো আর ভাইভা শেয়ার করা হতো না।
বোর্ডঃ শ্রদ্ধেয় শাহজাহান আলী মোল্লা স্যার
সময়ঃ ১৯-২০ মিনিট
তারিখঃ ২৬ আগষ্ট
সিরিয়ালঃ ৫/১২
ইংরেজিতে যাতে প্রশ্ন না করে তার জন্য আসতে পারি স্যার বলে ভিতরে ঢুকলাম। কিন্তু কাজ হইলো না। ঢুকে একটা সুন্দর হাসি দিয়ে সালাম দিলাম।স্যার বসতে বললেন এবং বসে একটা বিরাট হাসি দিয়ে ধইন্যবাদ দিলাম। তারপর পুরোটা সময়ই মুখটা হাসিহাসি করে রাখার চেষ্টা করেছি।
স্যারঃ তোমার ডিপার্টমেন্ট?
আমিঃ স্যার Tourism and Hospitality Management
স্যারঃ কোন ফ্যাকাল্টি?
আমিঃ বললাম। স্যার প্রথমে বুঝতে পারছিলেন না। বললেন এটা কি আইবিএর সাব্জেক্ট!!! , 😄😄😄 আমি বললাম না স্যার। পরে সব কিছু বুঝাইলাম।তারপরে স্যার জানতে চাওয়াতে ফ্যাকাল্টির ৯টা ডিপার্টমেন্টেরই নাম বললাম।
স্যারঃ ফার্স্ট চয়েস? ( প্রশাসন) সেকেন্ড? (পুলিশ)
পুলিশ শুনেই এক্সটার্নাল স্যার চেয়ারম্যান স্যারকে বললেন " স্যার পুলিশহহহহ হইতে চায় 😎😎। সম্ভবত আমার এই বিশাল চেহারার জন্য বলেছেন।
স্যারঃ এপেয়ার্ড!!! বাহ বাহ। এক্সাম শেষ হয়েছিলো তো? পরে চেক করলো যে শেষ হয়েছে কিনা :p
স্যারঃ বাংলাদেশের পর্যটনের সম্ভাবনা কি? ( ইংরেজিতে)
আমিঃ উত্তর দিলাম। নাফ ট্যুরিজম প্লান, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক জোরে জোরে বললাম যাতে এটা থেকে প্রশ্ন করে। কিন্তু স্যার আমার চেয়েও বেশি চালাক। নাফের দিকে ফিরেও তাকাইলো না 🙄🙄।সন্তুষ্ট মনে হলো।
স্যারঃবাংলাদেশের পর্যটন নিয়ে কি কি পরিকল্পনা আছে? সমস্যাগুলো কোথায় হচ্ছে? ফরেন ট্যুরিস্ট কেন আসে না? ( ইংরেজিতে)
আমিঃ বললাম। সন্তুষ্ট
স্যারঃ এমিনিটিস ছাড়া আর কি কি আছে?
আমিঃ বললাম। সন্তুষ্ট না।
স্যারঃ রিলিজিয়াস ট্যুরিজম নিয়ে বলতে পারতে। কতো মানুষ ধর্মীয় কাজে আসে।
আমিঃ জ্বী স্যার জ্বী স্যার। বিশ্ব ইজতেমা
স্যারঃ এতোসময় এই কথা কই ছিলো? কয়েকটি হিন্দু ধর্মীয় পর্যটন স্থানের নাম বলো। বাংলাদেশ এবং বিশ্বের টোটাল জিডিপিতে পর্যটনের %কতো?
আমিঃ আদিনাথ, সীতাকুণ্ড ও লাঙ্গলবন্দ। ২.৮% ও ৪.৭%
স্যারঃ শ্রীমদভগবদগীতা পড়েছো!!
আমিঃ ভয় পাইয়া গেছি। এই বুঝি গেলো রে। বললাম জ্বী স্যার অনেক আগে পড়েছি।
স্যারঃ আচ্ছা একটা শ্লোক বলো?
আমিঃ তমক্ষরং পরমং বেদিতব্যং বললাম। আমি যে সৎ তা প্রমাণ করার জন্য 😄 নিজে থেকেই বললাম বাংলা অনুবাদ জানি না। তারপর বললাম আরেকটা জানি স্যার। সেটার অনুবাদও জানি। বলতে বলার পর থ্রি নট থ্রি দিয়ে শ্যুট করলাম। যদা যদাহি ধর্মস্য....। স্যার সন্তুষ্ট বলে মনে হলো।
হঠাৎ করে চেয়ারম্যান স্যারের প্রশ্ন ধর্মে বিশ্বাস করি কিনা?
আমি আবার ভ্যাবাচ্যাকা খাইলাম। পরে বললাম জ্বী স্যার করি।
স্যারঃ ধরুন আপনি নওগাঁ জেলার ডিসি। স্বাধীনতা দিবসে ভাষন দিন।
আমিঃ দিলাম। প্রথমে সম্ভাষণ করে তারপর স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়ন নিয়ে বললাম। আমরা সবাই যদি নিজ নিজ জায়গায় থেকে স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাই তাহলেই দেশের উন্নতি হবে,সমৃদ্ধি আসবে। নিজেরা শুধু নিজেদের কাজটুকু সততা ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে করে গেলেই আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন সম্ভব। যেহেতু ডিসি তাই উপদেশমূলক বক্তৃতা করবেন এবং অবশ্যই দাঁড়িয়ে বলবেন।পুরো বিষয়টা মনে নাই। তবে মূল কথা এগুলোই। ২-৩ মিনিট বলার পর স্যার বসতে বললেন। স্যার খুব খুশি হয়েছেন মনে হলো। তবে নওগাঁ শব্দটা শুনিনি।
পরে স্যার বললেন আমি বললাম নওগাঁ নিয়ে আর আপনি দিলেন ফরিদপুর দিয়ে!!
আমি সরি স্যার বললাম।
স্যারঃ ২৬ মার্চের ঘোষণা কোথা থেকে দেওয়া হয়? ২৬ মার্চ কি দিবস?
আমিঃ ঘোষণা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলাম। তারা খুশি। কিন্তু স্বাধীনতা দিবস বলাতে বললো জাতীয় দিবস হবে না? আমি বললাম দুটোই স্যার।
স্যারঃ এমন একটা বিষয়ের কথা বলেন যা আগে বিশ্বাস করতেন কিন্তু এখন করেন না?
আমিঃ স্যার আগে ভাবতাম পড়াশোনা করলেই শিক্ষিত হওয়া যায় কিন্তু এখন ভাবি শুধু পড়াশোনা করলেই শিক্ষিত হওয়া যায় না, আরও অনেক গুণাবলির দরকার হয়।
এক্সপ্রেশন দেখে মনে হলো পুরা লং অফ দিয়ে ছয় মারছি।
স্যারঃ আপনার তিনটা গুণ বলেন যার জন্য আপনাকে প্রশাসনে নিবো?
আমিঃ উত্তর রেডি ছিলো কিন্তু তা বললাম না। প্রথমে চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি বললাম তারপর সৎ বললাম এবং শেষে বললাম আমি আমার দেশের মানুষকে খুব ভালোবাসি। ইমোশন দিলাম 😌কিন্তু সন্তুষ্ট কিনা বুঝলাম না।
আচ্ছা আপনি এখন আসতে পারেন। আমি ধন্যবাদ দিয়ে ও সালাম দিয়ে একটু পিছনে এসে বের হয়ে আসলাম।
স্যারদের ব্যবহার অত্যন্ত ভালো। একটা বকাও দেন নাই। খুবই ভালো ব্যবহার করেছেন। আমি তাদের ব্যবহারে সত্যিই অভিভূত।
আপনাদের কাছে অনুরোধ ভাইভা নিয়ে সিরিয়াস থাকেন কিন্তু সেই সিরিয়াসনেস ভাইভার দুইদিন আগে ঝেড়ে ফেলুন। মনে মনে ভাববেন কথা বলতে যাচ্ছি। ২০ মিনিট গল্প করবো ব্যাস। অনেকে একদম চুপচাপ থাকে। এটা করবেন না। প্রচুর গল্প করবেন। আমি তো আমার বোর্ডের ৩ জন সহযাত্রীর সাথে ব্যাপক খাতির জমিয়ে ফেলেছিলাম। আর ইংরেজিতে দুর্বলতা থাকলে প্রচুর প্রাকটিস করুন। রিসেন্ট প্রতিটা ঘটনার ব্যাপারে আপডেট থাকুন। বঙ্গবন্ধু, জেলা,ফার্স্ট চয়েস পড়ুন। এটুকুই যথেষ্ট।
তারপর অফিসের বাইরে বের হয়ে একবার তারপর গেটে একবার সংবাদ সম্মেলন করলাম এবং শেষে হলে এসে আরও প্রায় ২০ বার ভাইভা দিয়ে ফেললাম।
অনেক বেশি দীর্ঘায়িত করার জন্য দুঃখিত। প্রথম ১০ মিনিট ইংরেজিতে ও বাকিটুকু বাংলায় হয়েছে।এই গ্রুপ থেকে অনেক উপকার পেয়েছি তাই কিছুটা ফেরত দেওয়ার ইচ্ছা থেকে ভাইভা শেয়ার করলাম।
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
Papon Kumar Saha
THM,DU
Recently Jobless