এ টু জেড অব বিসিএস এক্সাম
যে পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা - ২০১৪ এর ভিত্তিতে সিভিল সার্ভিসের ২৬ টি ক্যাডারে জনবল নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাই করে তাকে বিসিএস পরীক্ষা বলে। পরীক্ষাটা কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো।
০১) আবেদন দাখিলঃ প্রতিবছর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন ক্যাডারের শূন্যপদের তালিকা পাওয়ার পর সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) পদসংখ্যা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স ও পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ইত্যাদি সম্বলিত বিসিএস পরীক্ষার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ওয়েবসাইট (www.bpsc.gov.bd) ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নির্দেশনা অনুসারে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। আবেদন ফি ৭০০ টাকা।
০২) প্রিলিমিনারি পরীক্ষাঃ প্রিলি পরীক্ষায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, গাণিতিক যুক্তি, মানসিক দক্ষতা, ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনের উপর ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় ২০০ টি এমসিকিউ থাকবে। সময় পাবেন ০২ (দুই) ঘন্টা। প্রত্যেকটি সঠিক উত্তরের জন্য আপনি ০১ (এক) নম্বর পাবেন। আর প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য আপনার প্রাপ্ত নম্বর থেকে ০.৫০ (শূন্য দশমিক পাঁচ শূন্য) নম্বর কাটা যাবে। এই পরীক্ষায় নির্দিষ্ট কোন পাস নম্বর নাই।
০৩) লিখিত পরীক্ষাঃ প্রিলিমিনারি পরীক্ষার উত্তীর্ণ প্রার্থীরাই লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। সাধারণ (General) ক্যাডারে অথবা কারিগরি বা পেশাগত (Technical or Professional) ক্যাডারে আবেদন করলে মোট ৯০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। সাধারণ (General) ক্যাডার এবং কারিগরি বা পেশাগত (Technical or Professional) ক্যাডার মানে উভয় (Both) ক্যাডারে আবেদন করলে মোট ১১০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। লিখিত পরীক্ষার পাস নম্বর ৫০% অর্থাৎ ৯০০ নম্বরের ক্ষেত্রে মোটের উপর ৪৫০ এবং ১১০০ নম্বরের ক্ষেত্রে মোটের উপর ৫৫০ নম্বর পেলেই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে বিবেচনা করা হবে। তবে কোন বিষয়ে ৩০% এর কম নম্বর পেলে তিনি সেই বিষয়ে কোন নম্বর পাননি বলে ধরা হবে।
০৪) মৌখিক পরীক্ষাঃ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরাই মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। মৌখিক পরীক্ষায় ২০০ নম্বর থাকে। ৫০% নম্বর মানে ১০০ নম্বর পেলেই উত্তীর্ণ। তবে উত্তীর্ণ হওয়া মানেই বিসিএস ক্যাডার হওয়া না। ভাইভা উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে থেকে প্রথম দিকের সিরিয়ালে থাকা সৌভাগ্যবানরাই বিসিএস ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ পাবেন। যারা ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ পাবেন না, পিএসসি তাঁদের বিভিন্ন সরকারি প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের উদ্যোগ নেয়। ফলে এখান থেকেও অনেকেই বিভিন্ন চাকরিতে নিয়োগের সুপারিশ পান।
০৫) স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ ক্যাডার পদে সুপারিশপ্রাপ্তদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাঁদের ওয়েবসাইটে (www.dghs.gov.bd) নোটিশ এবং স্থায়ী ঠিকানায় পত্র প্রেরণের মাধ্যমে সুপারিশপ্রাপ্তদের ঢাকায় অবস্থিত সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ডাকবেন। সেখানে চোখ, মূত্র, ওজন, উচ্চতা, বুকের মাপ ইত্যাদি পরীক্ষা করা হবে।
০৬) পুলিশ ভেরিফিকেশনঃ আবেদন ও অন্যান্য সময় দেওয়া সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তির তথ্য সঠিক কিনা এবং অতীত কার্যাকলাপ যেমন- প্রার্থীর নামে কোন মামলা বা নারীঘটিত কেলেঙ্কারি আছে কিনা ইত্যাদি সম্পর্কে জানার জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়। নামে পুলিশ ভেরিফিকেশন হলেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জাতীয় গোয়েন্দা পরিদপ্তর (এনএসআই), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) ইত্যাদি বিভাগ থেকেও এসব বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়। খোঁজখবরে প্রাপ্ত তথ্য জেলা থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়।
০৭) প্রজ্ঞাপনঃ সুপারিশপ্রাপ্তদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের তথ্য একত্রিত করে যাচাই-বাছাই করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যাদের সবকিছু ঠিকঠাক পাওয়া যায়, তাঁদের নামে প্রজ্ঞাপন জারি করে এই মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনের কপি বিভিন্ন ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অতঃপর ক্যাডাররা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন।
সৈকত তালুকদার
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত!