বিসিএস প্রিলি + লিখিত + ভাইভা
CEDAW থেকে প্রায়ই প্রশ্ন হয়
নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয় Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination against Women, সংক্ষেপে যা CEDAW হিসেবে পরিচিত। বাংলায় এটিকে চিহ্নিত করা হয় ‘নারীর প্রতি সব বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও)’। ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক সনদটি গৃহীত হলেও ১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকর করা শুরু হয়। সে কারণে ‘৩ সেপ্টেম্বর’ অর্থাৎ যে তারিখ থেকে এটি কার্যকর করা হয় সেই তারিখটিকে ‘সিডও’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সিডওর তিনটি মৌলিক নীতি : ১. সমতার নীতি ২. বৈষম্যহীনতার নীতি ৩. শরিক রাষ্ট্রগুলোর দায়বদ্ধতার নীতির ওপর ভিত্তি করে রচিত সনদে রয়েছে ৩০টি ধারা। এক থেকে ১৬ পর্যন্ত ধারাগুলোতে ঘোষিত হয়েছে নারীর সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গৃহীত নীতিগুলো। ১৭ থেকে ২২ ধারায় বর্ণিত হয়েছে ‘সিডও’র কর্মপন্থা ও শরিক রাষ্ট্রগুলোর দায়বদ্ধতা পালনের পন্থাগুলো।
২৩ থেকে ৩০ ধারা ‘সিডও’ প্রশাসনসংক্রান্ত।
সিডও সনদের ১ থেকে ১৩ ধারা অর্থাৎ নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঘোষিত সমতার নীতির ধারার ২ নম্বর ধারাটি অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং এটিকে Heart of the Convention বলে চিহ্নিত করা হয়। ২ নম্বর ধারায় যে পাঁচটি উপধারা আছে, সেখানে বলা হয়েছে : রাষ্ট্রের সংবিধান ও আইনের মধ্যে নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের নীতি ঘোষণা করতে হবে। আইন যথাযথ প্রয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়বদ্ধতা রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করতে হবে। যেসব আইন-বিধি-প্রথা নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক অবস্থান তৈরি করে তা দূরীকরণে উপযুক্ত আইন গ্রহণ ও বাস্তবায়নে পদক্ষেপ রাষ্ট্রকে গ্রহণ করতে হবে।
শতাব্দীব্যাপী নারী আন্দোলনের অভিযাত্রা ও বিংশ শতাব্দীর মানবাধিকার আন্দোলনের অনুকূল পরিবেশে জাতিসংঘ নারী আন্দোলনের অগ্রগতির নানা উদ্যোগের ফসল ‘সিডও সনদ’। এই সনদ প্রণয়ন বা কার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ওয়ার্কিং গ্রুপ নারী জাতির মর্যাদাবিষয়ক কমিশন ও সাধারণ পরিষদের মধ্যে পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন সময় আলোচনা ও পর্যালোচনার পর গৃহীত হয় ‘সিডও সনদ’। বিভিন্ন রাষ্ট্র সনদে স্বাক্ষর শুরু করে ১৯৮০ সালে। বাংলাদেশ এই দলিলে স্বাক্ষর করে ১৯৮৪ সালের ৬ নভেম্বর। এই স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ‘সিডও সনদ’ বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। যদিও বাংলাদেশ ‘সিডও সনদে’ স্বাক্ষর করার সময় চারটি ধারা সংরক্ষণ করে, অর্থাৎ এই চারটি ধারা বাস্তবায়নে সেই সময় অপারগতা প্রকাশ করে। নারী আন্দোলনের চাপের ফলে ১৯৯৬ সালে ১৫(ক), ১৬-১-এর (গ) ধারার সংরক্ষণ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। ২ নম্বর ধারার কথা এর আগে বিস্তারিত বলা হয়েছে। ১৬-১(চ) ধারায় নারীর বৈষম্যের ক্ষেত্রে বিরাজমান পারিবারিক, বিবাহ ও নাগরিক অধিকারের নীতিগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং নারীর মানবাধিকার অর্থাৎ সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সিডওর যে ধারাগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মূল প্রতিকূলতাকেই সংরক্ষণ করা হয়েছে।