৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ (বাংলার ম্যাগনাকার্টা/বাংলার মুক্তির সনদ)
★ তারিখ: ৭ই মার্চ ১৯৭১ সাল(রবিবার)।
বাংলায় :২২ ফাল্গুন, ১৩৭৭ বঙ্গাব্দ।
★ শুরুর :বিকেল ৩টা ২০মিনিট।
★ স্থান : তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান( বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান )ঢাকা।
ঐতিহাসিক স্থানটি স্বাধীনতা চত্বর নামেও পরিচিত।
★ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ভিডিও রেকর্ড করেন,
--- " অাবুল খায়ের"
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম কর্পোরেশন।
তিনি এ ভাষণটি রেকর্ড করার জন্য ২০১৪ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা দিবস পদক লাভ করেন।
★ ৭ মার্চের ভাষণের সাউন্ড রেকর্ডকারী-
এ এইচ খন্দকার।
★মাইকের নাম-- ''কল রেডি" ।
★ ভাষণের স্থায়িত্ব :
ভাষণ দেন ২৩ মিনিট ।কিন্তু রেকর্ড করা হয় ১৯ মিনিট/১৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড / ১৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড।
★মোট শব্দ : ১১০৮টি
★সর্বমোট বিধি :৩৫ টি
★ ভাষণটি অনূদিত হয়েছে :১২ টি ভাষায় (৪৩টি ভাষায় অনুবাদের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে) ।
★ভাষণটি ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে ৫ম তফসিলে সংযোজন করা হয়েছে।
★ রেসকোর্সে উপস্থিত ছিল: প্রায় ১০ লাখ মানুষ।
★ ভাষণে উপস্থাপন করা হয় : ৪ দফা দাবি।
★ দাবি ৪ টি হলো:
১. সামরিক আইন (মার্শাল লো) প্রত্যাহার করতে হবে।
২. সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে।
৩. ১৯৬৯ সালের সহ এই গণহত্যার তদন্ত করতে হবে।
৪. নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
★এ ভাষণে ৩ জন পাকিস্তানি ব্যাক্তির কথা উল্লেখ রয়েছে।
তারা হলেন --- ইয়াহিয়া খান,ভুট্টো সাহেব এবং মার্শাল লো জারি কারী আইয়ুব খান।
★ মূল বক্তব্য: স্বাধীনতা তথা মুক্তির সংগ্রামের ঘোষণা।
"এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম"।
★এ ভাষণের
১ম উক্তি : ভাইয়েরা আমার।
শেষ উক্তি: জয় বাংলা।
★উল্লেখযোগ্য অংশ : "রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো
ইনশাল্লাহ"।
★এই সময় সারাদেশে ৩ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন চলছিলো।
★ ভাষণের প্রেক্ষাপট :১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী এই দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে ১লা মার্চ এই অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন। এই সংবাদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। তিনি ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই পটভূমিতেই ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক একত্রিত হয়; পুরো ময়দান পরিণত হয় এক জনসমুদ্রে। এই জনতা এবং সার্বিকভাবে সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রদান করেন।
★ ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর UNESCO এই ভাষণকে
Memory of the World Register এর অন্তর্ভুক্ত করে।
- ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক পরামর্শক কমিটি (IAC)
১৩০টি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল, নথি ও
বক্তৃতার মধ্যে ৭৮টি বিষয়কে নির্বাচিত করে, এর
মধ্যে ৭ মার্চ ভাষণের অবস্থান ৪৮তম।
- ফ্রান্সের প্যারিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি "মোঃ শহিদুল ইসলাম " ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি "মফিদুল হক" বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৭ মার্চ ভাষণের স্বীকৃতির জন্য " ১২ পৃষ্ঠার"
একটি আবেদন পত্র প্রেরণ করেন।
- স্বীকৃতির স্বপক্ষে ১০টি প্রয়োজনীয় তথ্য, নথি ও
প্রমাণপত্র জমা দেয়া হয়।
★ প্যারিসে ইউনেস্কো কার্যালয়ে অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেন
-----মহাপরিচালক ইরিনা বেকোভা।
★ ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জ্যাকব এফ ফিল্ডের ভাষণ সংকলনের ইংরেজি অনূদিত "We shall fight of the beaches: "The Speech the Inspired History" বইতে ২০১ পৃষ্টায়
বিশ্বের সেরা ৪১টি ভাষণের মধ্য স্থান পেয়েছে ৭ই মার্চের ভাষণ।
★ জ্যাকবের বইয়ে ভাষণটির শিরোনাম দেয়া হয়েছে
The Struggle : This Time is the Struggle for Independence.
★বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট
আব্রাহাম লিংকনের ৩ মিনিটের "গেটিসবার্গ "বক্তৃতার সাথে তুলনা করা হয়।
★"শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ কেবল একটি ভাষণ নয়,এটি একটি অনন্য রণকৌশলের দলিল" উক্তিটি করেছেন
--কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো।
★ "৭ মার্চের ভাষণ আসলে ছিল স্বাধীনতার মূল দলিল" উক্তিটি করেছেন
---বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা।
👉👉 ১৩ নভেম্বর ২০১৭-তে ঐতিহাসিক এ ভাষণের উপর
একটি বিশ্লেষণধর্মী বই "বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ:
রাজনীতির মহাকাব্য" শিরোনামে
আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে ই-বুক ও মোবাইল অ্যাপ হিসেবে উদ্বোধন করা হয়।
👉👉 ৭ মার্চের ভাষণের উপর নির্মিত চলচ্চিত্র ----- ওরা ১১ জন
পরিচালক :চাষী নজরুল ইসলাম।
👉👉 রচিত কবিতাঃ " স্বাধীনতা শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো "
রচিয়তা : নির্মলেন্দু গুন।
👉👉 এ ভাষণকে "রাজনৈতিক কাব্য" বলে আখ্যায়িত করেছেন
--- নির্মলেন্দু গুন
👉👉এ ভাষণটি মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রচারিত হতো ---" বজ্রকন্ঠ "নামে
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে।
✅এ ভাষণটি ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতির গ্রীন সিগন্যাল।
✅এ ভাষণের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে "রাজনৈতিক কবি " (Poet of Politics)" উপাধি দিয়েছে----
যুক্তরাষ্ট্রের নিউজউইক (Newsweek) ম্যাগাজিন ৫ এপ্রিল ১৯৭১ সালে
৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দেখে নিই:
১৯৭১ সারের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ৪টি দাবি উল্লেখ করা হয়
ক.চলমান সামরিক আইন প্রত্যাহার
খ. সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া
গ. গণহত্যার তদন্ত করা
ঘ. নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
ভাষণটির সময়সীমা :
১৮মিনিট ( সূত্র: বিভিন্ন গাইড ও উইকিপিডিয়া)
১৯মিনিট ( সূত্র: উচ্চ মাধ্যমিক পৌরনীতি ও সুশাসন -ড. মোজাম্মেল হক)
১৪.০৩ মিনিট ( ইউটিউব )
৭ মার্চের ভাষণ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ‘বজ্রকণ্ঠ’ নামে প্রচার করে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করত ।
এটি ৪৩টি ভাষায় অনুবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১২টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে
ভাষণটি
আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বসেরার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ।
ইংরেজিতে অনুদিত ভাষণের বইটির নাম ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস’- দ্য স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্টরি [we shall figth on the beaches: the speeches that inspired history]’।
বইটির সঙ্কলক - জ্যাকব এফ ফিল্ড। খৃস্টপূর্ব ৪৩১ সাল থেকে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেরা
ভাষণ নিয়ে ২২৩ পৃষ্ঠার বই এটি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার উইনস্টন চার্চিলের ভাষণ থেকে নেয়া শিরোনামের এই সঙ্কলন গ্রন্থের শেষ ভাষণটি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যানের ‘টিয়ারস ডাউন ওয়াল’।
বইটির ২০১ পৃষ্ঠায় ‘দ্য স্ট্রাগল দিস টাইম ইজ ট্য স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স’ শিরোনামে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ।